মহান মে দিবস শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তি সংগ্রামের শপথ নেওয়ার দিন। শ্রমিকদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বিশ্ব জুড়েই তা এক বিপ্লবী সংগ্রামের আহ্বান। আমেরিকার শিকাগো’র হে মার্কেটে ১ মে ৮ ঘন্টা শ্রম-দিবসের দাবীতে শ্রমিকের রক্তে রাজপথ লাল হলো, ষড়যন্ত্র করে শাসকরা শ্রমিক নেতাদের ফাঁসি দিল। সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের নেতা মহামতি এঙ্গেলস-এর নেতৃত্বে ২য় আন্তর্জাতিক ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে মহান মে দিবসের ডাক শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের ঐক্যবদ্ধ হবার, বিপ্লবী চেতনায় শাণিত হবার আওয়াজ।
সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা ও তার শোষণমূলক অর্থনীতি শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের জীবনে পাথরের মত চেপে বসেছে। শ্রমিকরা অমানবিক জীবন যাপন করছেন, নিপীড়িত হচ্ছেন। অথচ তারাই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় এদেশীয় দালাল আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত ও তাদের নির্বাচনী ভোটের রাজনীতি শ্রমিকদের দুর্দশার কারণ। দেশে সকল মিল কারখানার মালিক ও প্রতিনিধি তারাই। তারাই আবার সংসদীয় রাজনীতিতে এমপি মন্ত্রী হয়ে তাদেরই শ্রেণী স্বার্থে দেশ পরিচালনা করে। তারাই শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন প্রতিরোধ ও ধ্বংস করার জন্য পুলিশ র্যা ব আর্মি লেলিয়ে দেয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করে, শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন তৈরি করে, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে। মালিক শ্রেণী শ্রমিকদের শোষণের জন্য এগুলো করবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের কাজই হলো শ্রমিকদের অস্থিমজ্জা থেকে মুনাফা লুন্ঠন। এ ব্যবস্থার অধীনে মুনাফাভোগী মলিকদের হাত থেকে শ্রমিক শ্রেণী বাঁচতে পারে না। রাষ্ট্রীয় কোর্ট কাচারী আইন আদালতও শ্রমিকদের বিপক্ষে শোষকদের স্বার্থে কাজ করে।
দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিকদের ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তা বিদ্রোহে ফেটে পড়ছে। একদিকে শোষণ নিপীড়ন, অন্যদিকে মালিক পক্ষের অতি-মুনাফালোভ ও অবহেলার জন্য ফ্যাক্টরীতে আগুন লেগে ও অন্যবিধভাবে শত শত শ্রমিকের অপমৃত্যু হচ্ছে। এগুলো আজ দাস সমাজের কথা মনে করিয়ে দেয়। বেতন ভাতা বৃদ্ধি বা বকেয়া বেতনের দাবীতে আন্দোলন অথবা মালিক শ্রেণীর চাপিয়ে দেওয়া যেকোন অন্যায় বা অধীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন তাদের করতে হয়। এগুলো তাদের জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। কিন্তু শ্রমিকরা আন্দোলনের এই বৃত্তের মধ্যেই যদি ঘুরপাক খায় তবে হাজার বছর পরেও তাদের সমস্যা একই রয়ে যাবে। তার কোন সুরাহা হবে না। কারণ, মালিক শ্রেণী তাদের শ্রেণীগত রাজনীতি ও ক্ষমতার প্রশ্নে যথেষ্ট সচেতন ও দক্ষ। এজন্যই শ্রমিকদের স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন কারার অধিকারকেও তারা ভয়ার্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কাজে কাজেই শ্রমিক শ্রেণীকেও তাদের শ্রেণীগত রাজনৈতিক মতাদর্শে সচেতন ও সজ্জিত হতে হবে। ধনীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা উৎখাতের লক্ষ্যেই শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক সংগঠন গড়তে হবে। পাশাপাশি দাবীদাওয়ার আন্দোলনও করবে।
সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় কৃষক, নারী, আদিবাসী, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণও শোষিত বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই, শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে তাদেরও বিপ্লবী রাজনীতিতে সজ্জিত হয়ে শ্রমিক শ্রেণীর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।
মে দিবসকে ঘিরে শাসক শ্রেণীর সচেতন পরিকল্পনা থাকে। তারা তাদের পার্টি সংগঠনের বা তাদের নেতৃত্বে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যানারে লাল ফিতা বেঁধে শ্রমিকদের র্যা লীতে নামায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। তারা নেচে গেয়ে মে দিবস উদযাপনের আয়োজন করে। তারা মে দিবসের প্রকৃত চেতনা মালিক-বুর্জোয়া-শোষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংগ্রাম, বিদ্রোহ ও বিপ্লবকে আড়াল করে। শ্রমিক শ্রেণীকে বুঝতে হবে শোষকদের এই কর্মসূচি মে দিবসের প্রকৃত চেতনা বা দিশাকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এগুলো সবই শ্রমিকদের বিপথগামী করার জন্য তা খুবই স্পষ্ট। আবার বিভিন্ন নামধারী বামপন্থী বা পেটি বুর্জোয়া শ্রমিক সংগঠনকেও বর্জন করতে হবে। কারণ, তারা শুধু শ্রমিকদের দাবীদাওয়ার আন্দোলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের বিপ্লবী রাজনীতিকে আড়াল করে। শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শহীন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শাসকশ্রেণীর উচ্ছেদ চায় না।
তাই শ্রমিক শ্রেণীকে বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়া সংগঠনগুলোর বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মালিক শ্রেণীর প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া রাজনৈতিক পার্টির কর্মসূচির খপ্পরে পড়লে চলবে না। তারাই এই ব্যবস্থার রক্ষক। বিপরীতে শ্রমিকদের গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদের বিপ্লবী রাজনীতি, এগুতে হবে ক্ষমতা দখলের বিপ্লবী কর্মসূচির পথে। শ্রমিক শ্রেণীকে তাই মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী আদর্শে সজ্জিত হতে হবে, এবং সমাজের কৃষক ও অন্যান্য নিপীড়িত জাতিসত্ত্বা ও শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম ব্যবস্থার লক্ষ্যে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতে হবে। যে পথে লড়ছে পৃথিবীর দেশে দেশে মাওবাদী আন্দোলন। এটাই শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগণের জন্য মে দিবসের প্রকৃত দিশা।
-
সাম্প্রতিক লেখা
সংগ্রহ
বিষয়
-
Join 6 other subscribers
Blogroll
Top Clicks
- None