৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর” ও “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিটি” নির্মাণের নামে ২৫ হাজার একর কৃষকের ফসলী জমি, ভিটেমাটি, জলাশয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ উচ্ছেদ ও ধ্বংস করার দেশ ও জনগণবিরোধী এক মহা চক্রান্তের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিল এলাকার ৪০টি গ্রামের হাজার হাজার জনগণ এক বীরোচিত প্রতিরোধ আন্দোলন করে বিজয় অর্জন করেছেন। আমরা তাকে উচ্ছসিত অভিনন্দন জানাই।
তবে চক্রান্ত চলছেই। সরকার আড়িয়ল বিল থেকে পিছু হটার পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেয় বিমান বন্দর এখন পদ্মার ওপারে বা অন্য কোথাও করা হবে। তাই, এখন পদ্মার ওপারের জনগণকে আগাম সতর্ক হতে হবে। এবং দেশের যেকোন জায়গায় তার পুনউদ্যোগ নেয়া হলে তাকে একইভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।
দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর রয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অনেক কম এখনো ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, এগুলোকেই সম্প্রসারণ করে ও উন্নয়ন করে আরো কমপক্ষে ২০ বছরের চাহিদা মেটানো যায়। তাসত্ত্বেও এত বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে নতুন বিমান বন্দর কেন করতে চায় সরকার?
আসলে এই ধরণের বড় বড় তথাকথিত উন্নয়ন প্রজেক্ট আসে সাম্রাজ্যবাদীদের মাথা ও পরামর্শ থেকে, যাকে অনুগত সেবকের মত মেনে নেয় তাদের দালাল দেশীয় মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণী তাদের সরকার, বুদ্ধিজীবী ও আমলাদের মাধ্যমে। কারণ, এতে তাদের উভয় পক্ষেরই বিপুল লাভ রয়েছে। তাতে কৃষক ও জনগণের জমি, পেশা, পরিবেশ ধ্বংস হলে তাদের কিছুই যায় আসে না। এরকম প্রজেক্টই তারা নিয়েছিল ও নিয়ে চলেছে ফুলবাড়ীতে, রূপগঞ্জে, বাগেরহাটের রামপালে ও অন্যত্র।
আড়িয়ল বিল দখলের পক্ষে শেখ হাসিনা কুযুক্তি দিয়েছিল যে ঢাকা শহর বানাতে কি জমি, জলাশয় দখল হয়নি? হয়েছে বলেই তো আজ ঢাকা শহর সংখ্যাধিক মানুষের বসবাসের অযোগ্য এক কারাগারে পরিণত হয়েছে। হাসিনারা সারা দেশকে, সারা দেশের পরিবেশকে ঢাকার মতই করতে চায়, যেখানে সর্বোচ্চ ১০% লোকের জন্য (যার মাঝে হাসিনার গোষ্ঠী-জ্ঞাতিরা অবশ্যই থাকবে) অভিজাত সুন্দর বাসস্থান থাকবে; আর বাকী সব জনগণ ঢুকবে ঢাকার মত বস্তিগুলোতে যেখানে পানি, বিদ্যুত, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত শিক্ষালয়, মুক্ত বাতাস, প্রাকৃতিক জলাশয়, সুস্থ পরিবেশ, গাছগাছালী কিছুই থাকবে না।
তাই, এ ধরণের উন্নয়নকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে হবে বিশেষত কৃষককে, ও ব্যাপক জনগণকে। দেশের জন্য দরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উন্নয়ন কৌশল। যার প্রথম পদক্ষেপই হবে সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের উচ্ছিস্টভোগী মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া উন্নয়নকে প্রতিরোধ করা। সেজন্য বিপ্লবী সংগ্রামকে জোরদার করা ছাড়া জনগণের কোন গত্যন্তর নেই।