৮ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরীর দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকের আন্দোলনে পুনরায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, নারায়নগঞ্জসহ গার্মেন্টস শিল্প পাড়াগুলো। হাজার হাজার শ্রমিক তাদের এই ন্যায্য দাবীতে প্রায় প্রতিদিন আন্দোলন করেছেন, এখনও করছেন, আরো করবেন। পৃথিবীর প্রায় সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও বহু কথনে পটু প্রধানমন্ত্রি আন্দোলনের আগে আগে একবার মাত্র ঘোষনা করেছিলেন যে, তারা আবার গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী বাড়াবেন; কিন্তু তার পর থেকে তিনিও মুখে এ বিষয়ে এমন কুলুপ এঁটে দিয়েছেন যে, বোঝাই যাচ্ছে তিনি ও তার সরকার কী মহা বিপদেই না পড়েছেন। এখন ভোটের আগে ৪০ লাখ শ্রমিকের এই খাতকে অসন্তুষ্ট করলে তার ভোটের বাক্সে টান পড়বে সেটা এই ভোট বিশারদ ভাল করেই জানেন। আর অন্যদিকে গার্মেন্টেসের মালিকেরা, যারা তার নিজ ঘরেরই লোক, যাদের টাকায় তার পার্টি চলে, যারা তার পার্টির মন্ত্রী এমপি, তাদের টাকার থলিতে টান দেয়াকেও মেনে নেয়া যায় না। এ অবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের পিঠে ছুরি মারায় ওস্তাদ, পরিবহন মালিক ও পরিবহন চাঁদাবাজ মন্ত্রী শাহজাহান খানকে মাঠে নামিয়েও রক্ষা হয়নি। শ্রমিকেরা ৮ হাজার টাকার দাবী শিখে গেছেন। তাই, আসল হাতিয়ার পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি নামিয়েছেন। আর ঘোষণা দিয়েছেন নভেম্বরে মজুরী কাঠামো জানাবেন।
শ্রমিক শ্রেণীর নিম্নতম মজুরী ৮ হাজার টাকাও কোনক্রমেই পূর্ণ দাবি নয়। কারণ, মজুরী বাড়লেই বাসাভাড়া বেড়ে যাবে। দ্রব্যমূল্য এখনি আকাশ ছোঁয়া, তা আরো বাড়বে। শ্রমিকের বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন, ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনীতি করবার অধিকার, সন্তানদের লেখাপড়া, খেলাধুলা, প্রতিপালনের ব্যবস্থার দাবিও জানাতে হবে। অথচ এখনও শ্রমিককে বকেয়া বেতন, ওভারটাইম, আন্দোলন করলেই ছাটাই, এমনকি শারিরীক নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।
এসব যেন শ্রমিক শ্রেণী ভালভাবে না বোঝেন ও আন্দোলনকে আপোষহীনভাবে না চালান সেজন্য রয়েছে মালিক সংগঠন, বুর্জোয়া দলগুলো, বুর্জোয়া সুশীল সমাজ, তাদের মিডিয়া এবং পুলিশ-র্যাব-বিজিবি ছাড়াও বুর্জোয়া দলীয় মাস্তান বাহিনী। তারা শ্রমিক আন্দোলনে বিভ্রান্তি, বিভক্তি, ষড়যন্ত্র, অন্তর্ঘাত করার জন্য শ্রমিকের আন্দোলনে বুর্জোয়া রাজনীতি ও বুর্জোয়া নেতাদের ঢুকিয়ে রাখে। তাদেরকে উচ্ছেদ ছাড়া শ্রমিক শ্রেণীর দাবীগুলোও ভালভাবে আদায় হতে পারে না।
এমনকি ৮ হাজার টাকার দাবি আদায় হলেও দুদিন পরই তা আজকের ৩ হাজারের সমমানের হয়ে যাবে। পুঁজিবাদে এটাই হয়ে আসছে ও হবে। তবুও শ্রমিককে এইসব দাবির জন্য আন্দোলন করতেই হবে। কিন্তু তাদেরকে বুঝতে হবে যে, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ সারা দুনিয়ায় যা করছে, এখানেও তাই করবে। শ্রমিক শোষিত হতেই থাকবেন, মালিকের পকেট ভরতেই থাকবে, যতদিন বুর্জোয়া ব্যবস্থা অর্থাৎ পুঁজিবাদ থাকবে। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমাজতন্ত্র, যা শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতির মাধ্যমেই শুধু হতে পারে। সমাজতন্ত্র হলো শ্রমিক রাজ; যাতে তাদের সাথে থাকবে কৃষকরাসহ অন্য সকল শ্রমজীবীরাও। এই বিপ্লবী ও শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণীকে শিক্ষিত হয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাতসহ সকল পদের বুর্জোয়া রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিক বিপ্লবের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। আর আশু আন্দোলনগুলোকে এই রাজনীতির অধীনেই চালাতে হবে। তাহলেই শ্রমিক শ্রেণী আশু দাবী আদায় করতে যেমন সক্ষম হবে, তেমনি চূড়ান্ত মুক্তির পথেও এগোতে সক্ষম হবে।
-
সাম্প্রতিক লেখা
সংগ্রহ
বিষয়
-
Join 6 other subscribers
Blogroll
Top Clicks
- None