নিম্নতম দাবীনামার কিছু অংশ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য

১) নির্বাচন উপলক্ষে পরামর্শ, নির্দেশ, শর্ত প্রভৃতি ছদ্মাবরণে সকল বৈদেশিক হস্তক্ষেপ অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। বিশেষতঃ আমেরিকা, ইইউ, ভারত, জাতিসংঘ, সৌদি আরব, বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ সকল রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, তথাকথিত দাতা গোষ্ঠি কর্তৃক এ দেশের রাজনীতিতে সকল হস্তপেকে অবৈধ ঘোষণা করা। যারা একগুঁয়ের ক্ষমতা করতে চায় তাদেরকে বহিস্কার করা।
২) কালো টাকার মালিক, ঋণ খেলাপি, রেল, পদ্মাসেতু, শেয়ার বাজার, হলমার্কসহ সাম্প্রতিকতম সরকারের আমলে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী-গডফাদারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা এবং তাদের তালিকা প্রকাশ ও প্রচার করা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের দ্বারা দাবিকৃত বিদেশে অর্থপাচারকারী, দেশদ্রোহী, জঙ্গী হামলা ও হত্যা-গুমের সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসী গডফাদারদের তালিকা প্রকাশ, তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা।
৩) তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে বন্দী হত্যা, গুম, মানবাধিকার বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদগাতা র‌্যাবকে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল তৎপরতা থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ইতিমধ্যে সংঘটিত প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী হত্যাকান্ড ও গুমের সাথে জড়িত র‌্যাব-পুলিশের মধ্যকার প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। এর সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা ও তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
৪) বিভিন্ন সময়কার সামরিক শাসন ও একদলীয় স্বৈরাচারী শাসনের হোতাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
৫) গণবিরোধী সশস্ত্র মৌলবাদী তৎপরতার আলোচিত গডফাদারদের তালিকা প্রকাশ, তাদের গ্রেফতার করা ও তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নিষিদ্ধ করা।
৬) ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী এবং পাক-হানাদারদের পাবলম্বনকারী হিসেবে কর্মরত সকল দেশদ্রোহী নেতৃস্থানীয়দের তালিকা প্রকাশ করা এবং নির্বাচনে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা।
৭) নির্বাচনে ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতিকে ও ধর্মের সকল প্রকার ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৮) পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা। সেখান থেকে অঘোষিত সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও সকল সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার।
৯) প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসেবে দলগুলোর মাঝে অতিরিক্ত ২/৩ শ’ আসন বরাদ্দ করা।
জেলা-ভিত্তিক বা প্রতি তিন/পাঁচটি সাধারণ আসন পিছু একজন করে নারী প্রতিনিধি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা।
জাতিগত ও ভাষাগত (উর্দুভাষী/বিহারী) সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব হিসেবে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরতি ঘোষণা করা।
শ্রেণী ও পেশাগত প্রতিনিধিত্বের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরতি ঘোষণা করা।
সকল প্রার্র্র্র্র্থীর সম্পদের তালিকা প্রকাশ, তা উপযুক্ত কর্তৃপ কর্তৃক যাচাই করা এবং স্ব স্ব এলাকায় সে তালিকা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে
প্রচারের ব্যবস্থা করা।
নির্বাচনের জন্য ব্যক্তিগত সকল খরচ নিষিদ্ধ করা। সকল প্রচার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় করা। জামানত প্রথা বাতিল করা।
১০) উপরোক্ত কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করার জন্য বিদ্যমান সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদপন্থী, উগ্রজাতীয়তাবাদী, ধর্মবাদী, সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক ও প্রতারণামূলক সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করা। এবং তার অধীনে পরিচালিত বর্তমান সরকার বাতিল করা। উপরে আলোচিত নির্বাচনে অযোগ্য দল/ব্যক্তিবর্গ বাদে সকল প্রকৃত দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি সমন্বয়ে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা, একটি অস্থায়ী সাংবিধানিক নীতিমালা গ্রহণ করা এবং তার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন সংবিধান রচনার জন্য একটি সংবিধান সভা নির্বাচন করা।

******
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দল ও ব্যক্তি তথা প্রার্থীদের কাছে নিম্নোক্ত জরুরী দাবী নামার উপর সুস্পষ্ট ঘোষণা ও অঙ্গিকার আমরা দাবী করছিঃ
১। আমেরিকা-ভারতসহ সকল বৈদেশিক শক্তির সাথে সামরিক ও বেসামরিক যে নামেই হোক না কেন সকল অসম ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি বাতিল করা।
ভারতের সাথে হাসিনা-মনমোহন গণবিরোধী চুক্তি বাতিল করা। মার্কিনের সাথে টিকফা চুক্তি ও সন্ত্রাস বিরোধী সমঝোতা স্মারক বাতিল করা। সোফা, হানা চুক্তি বাতিল করা।
দেশ ও গণবিরোধী ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প ও রামপালে পরিবেশ ধংসকারী বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করা।
মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার বিপর্যয়ের জন্য দায়ী বৈদেশিক কোম্পানীকে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করা এবং এ জাতীয় সকল কোম্পানীকে এদেশে নিষিদ্ধ করা। ইতিমধ্যে সমুদ্রের তিনটি গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়ার চুক্তি বাতিল করা।
চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়নে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মার্কিনের সাথে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণসহ সকল চুক্তি বাতিল করা।
বিদ্যুৎ খাতকে কোন ক্রমেই কোন বিদেশী সংস্থার হাতে তুলে না দেয়া।
সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধ এবং ফেলানীসহ বর্বর হত্যাকান্ডগুলোর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা।
২। সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ, বর্ণবাদ, ইহুদীবাদকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করা, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন কর্মসূচির বিরোধিতা করা। ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ নামে বিশ্ব জনগণের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ-আগ্রাসনকে বিরোধিতা করা। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরানে সাম্রাজ্যবাদের হস্তক্ষেপ, আক্রমণ, আগ্রাসন, হুমকির সুস্পষ্ট বিরোধিতা করা।
৩। ‘খোদ কৃষকের হাতে জমি’ ও জমির সর্বোচ্চ সিলিং উর্বরতা ভেদে ১৫ থেকে ২৫ বিঘা নির্ধারণের ভিত্তিতে ভূমি সংস্কার করা। উদ্বৃত্ত জমি ও সকল খাস জমি ভূমিহীন-গরীব কৃষক ও কৃষি মজুরদের মাঝে বিনামূল্যে মাথাপিছু (পূর্ণ বয়স্ক নারী/পুরুষ নির্বিশেষে) বন্টন। নদী-খাল-বিল-ঘাট-বাজার ইজারা প্রথা বাতিল করা। বর্গা প্রথা অবসানের লে পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা গ্রহণ। উন্নয়ন ও শিল্পায়নের নামে কৃষি জমি দখলের রাষ্ট্রীয়, সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী ও বড় ধনীদের কৃষক বিরোধী কর্মসূচির অবসান। মহাজনী ও এনজিও সুদের অবসানের লক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিুতম মজুরী ৮ হাজার টাকা দাবী অবিলম্বে মেনে নিয়ে কার্যকরী করা, ইন্ডিষ্ট্রিয়াল পুলিশ অবিলম্বে বাতিল করা।
রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনে নিহত-আহত-নিখোঁজদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের তিপূরণ অবিলম্বে প্রদান করা। দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি অবিলম্বে ঘোষণা করা। দায়ী গার্মেন্টস মালিক ও ভবন মালিকদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের তিপূরণ তহবিল গঠন।
২৪ এপ্রিল শ্রমিক হত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা। রানা প্লাজার স্থানে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা। রানা প্লাজার স্থানকে শ্রমিক স্মৃতিসৌধ নামকরণ করা।
বন্ধ কলকারখানা চালু করা, চাকুরীচ্যুত ও ছাঁটাইকৃতদের চাকরীতে অবিলম্বে বহাল করা।
৫। ইংলিশ মিডিয়াম, মাদ্রাসা ও সাধারণ এই তিন ধারার শিক্ষা বাতিল করে প্রকৃত এক ধারার শিক্ষা চালু করা। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও জাতীয়করণ করা। মাধ্যমিক পর্যন্ত বিদেশী ভাষা শিক্ষা বাতিল করা ও মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু করা। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা চালু করা। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৬। জমি ও সম্পদে নারীর সমঅধিকার প্রদান এবং প্রগতিশীল বিবাহ ও পরিবার প্রথা প্রবর্তন করা।
৭। সকল জাতিগত সংখ্যালঘুদের পৃথক জাতিসত্বার স্বীকৃতি এবং পার্বত্য অঞ্চলকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা।
৯। চিকিৎসার বানিজ্যিকীকরণ বন্ধ করা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী বিনিয়োগ বন্ধ করা।
১০। পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার আলোচিত দুর্নীতির বিষয়ে পদপেক্ষ গ্রহণ।
১১। তথ্য-প্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা।

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in আন্দোলন 15. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s