নেপালে মাওবাদীদের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত

নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি-মাওবাদী (সিপিএন-এম)-এর ৭ম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে গত জানুয়ারি, ’১৩-এর ২য় সপ্তাহে। ৫ দিন ধরে চলা কংগ্রেসে সবমিলিয়ে ১,২০০ প্রতিনিধি, ৪০০ পর্যবেক্ষক, ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং ১০০ সাংস্কৃতিক শিল্পী-কর্মী অংশগ্রহণ করেন। চীন ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতগণ তাদের নিজ নিজ পার্টির পক্ষে এতে অংশ নেন। এছাড়া আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, তুরস্ক এবং কানাডাসহ ১১টি দেশ থেকে সিপিএন-এর ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির প্রতিনিধিগণ এতে অংশগ্রহণ ক’রে তাদের সংহতি ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
কংগ্রেস পার্টির রাজনৈতিক লাইন দশকব্যাপী “গণযুদ্ধ”-এর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে “জনগণের বিদ্রোহ” বা জনগণের উত্থান ঘটানোর লাইন অনুমোদন করেছে। বলা হয়েছে, দশকব্যাপী “গণযুদ্ধ”র ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাকে এতে কাজে লাগানো হবে। জাতীয় ভিত্তিক এই কর্মসূচিতে শহরগুলোতে কেডারদের জমায়েত করার জন্য দেশটিকে ৫টি ব্যুরোতে ভাগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কমরেড কিরনের নেতৃত্বাধীন প্রাক্তন মাওবাদী পার্টির বামপন্থী অংশ “জনগণের বিদ্রোহ” বা জনগণের উত্থান শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল। পান্তরে প্রচণ্ড ও বাবুরামের নেতৃত্বে সংশোধনবাদী অংশ “শান্তি ও সংবিধান”-এর লাইন গ্রহণ করে। মূলত এই রাজনৈতিক লাইনের বিতর্ককে কেন্দ্র করেই গত জুন, ’১২-এ নেপালের মাওবাদী পার্টি ভাগ হয় এবং পরবর্তীতে কমরেড মোহন বৈদ্য কিরণ-এর নেতৃত্বে পৃথক পার্টি সিপিএন-এম গঠিত হয় এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কংগ্রেস সিপিএন-এম-এর ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে। এর ২ জন ছাড়া বাকি সকলেই কংগ্রেসপূর্ব কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। কংগ্রেসে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কমরেড মোহন বৈদ্য (কিরন)। ভাইস চেয়ারম্যান হন কমরেড চন্দ্র প্রকাশ গাজুরেল (গৌরভ)। সাধারণ সম্পাদক হন রাম বাহাদুর থাপা (বাদল)। সম্পাদক হন দেব গুরুং ও নেত্র বিক্রম চাঁদ (বিপ্লব)।
নেপালকে একটি আধা-সামন্ততান্ত্রিক নয়া-ঔপনিবেশিক দেশ উল্লেখ ক’রে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাপ্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। শত্রু’র প্রশ্নে অভ্যন্তরীণ সূত্রে বলা হয়েছে আধা সামন্ততান্ত্রিক-সামন্ততান্ত্রিক এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহ; বহিঃশত্রু’র সূত্রে বলা হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ। নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পাদনের লক্ষে কংগ্রেস সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রামের দু’টি পলিসিই গ্রহণ করেছে। বলা হয়েছে যে, পরিস্থিতি দাবি করলে পার্টি আশুভাবে সশস্ত্র সংগ্রামে যাবে। উল্লেখ্য, এখনই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার জন্য কর্মী-জনগণের একটি অংশের ব্যাপক চাপ রয়েছে পার্টির ওপর। কমরেড কিরন বলেছেন, কিছু জনগণ এখনই সশস্ত্র সংগ্রাম শুরুর জন্য চাপ দিচ্ছেন; এটা আমাদেরকে দমনের সহজ কারণ হবে। সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় আমরা জনগণের এ বিষয়গুলো সামনে এগিয়ে নেবো। এছাড়া কংগ্রেস পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটি ১ম সভাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যেমন “জনগণের বিদ্রোহ” ত্বরান্বিত করার জন্য বড় শহরগুলোর নিকটবর্তী স্থানীয় কাঠামো ঠিক করা, পার্টির যুব শাখার স্বেচ্ছাসেবকদেরকে সামরিক শাখায় রূপান্তরিত করা।
সংবিধান সভার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কিরন বলেন, তা উপযুক্ত কিনা তার উপর নির্ভর করছে, আমরা অংশ নিতেও পারি আবার বর্জনও করতে পারি।
যদিও গত এপ্রিল, ’১৩-তে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, নভেম্বর, ’১৩-তে অনুষ্ঠিতব্য সংবিধান সভার নির্বাচন পার্টি বর্জন করবে। তাদের মতে বর্তমানে নেপালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সরকার বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ‘গণমুখী সংবিধান’ সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন। পরিবর্তে তারা গোলটেবিল বৈঠক ডাকার দাবি করছেন।
নেপালের বিপ্লবাকাঙ্খী জনগণ আগামীতে সিপিএন-এম কোন পথে আগায় সেটা দেখার অপোয়।

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s