যুদ্ধাপরাধী বিচারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করুন! যুদ্ধাপরাধীসহ সকল মানবতা বিরোধীদের বিচার নিশ্চিত করুন!

শাহবাগ স্কোয়ারের প্রতিবাদী জনগণ,
আপনাদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত। তাই আপনাদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। কেন খুনী কসাই কাদের মোল্লার লঘু শাস্তি হলো? কেন বিগত ৪০ বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি?

’৭১-এ সকল যুদ্ধাপরাধীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার প্রথম কাজটি করেছিল শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগ সরকার। এরা পাকিস্তানের চিহ্নিত ১৯৫জন যুদ্ধাপরাধীদেরকে মাফ করে দিয়েছিল। শেখ মুজিবের আমলে দেশীয় ৪০ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে মাফ পাওয়া ৩০ হাজারকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার বাকী কাজটি করেছিল জেনারেল জিয়া ও এরশাদ সরকার। তারপর খালেদা ও হাসিনা সরকার। ’৭১-এর থেকে শাসক শ্রেণীর প্রতিটি গোষ্ঠি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়া ও পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার অপরাধে অপরাধী। তারা কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি, করতে চায়নি। নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো ভড়ং ছাড়া। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ উভয়ই জামাতের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিল। ’৯৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামাত ছিল আওয়ামীলীগের বন্ধু। যার ধারাবাহিকতায় জামাত বিশেষতঃ গোলাম আজম এর আশীর্বাদে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। আজ যুদ্ধাপরাধীদের মাঝে প্রায় সকলেই পুনর্বাসিত হয়েছে জামাত, জাতীয়পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ এইসব বুর্জোয়া পার্টির মধ্যে।

সংগ্রামী জনতা,
দেশীয় ৩০ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করে দেয়ার পর বাকী ১০ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ ও গ্রেপ্তার না করে শুধুমাত্র জামাত বিএনপি’র গুটিকয়েক নেতাকে গ্রেপ্তার ও বিচারের ভাব দেখানোটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নাকি একটি প্রহসন তা আজ সংগ্রামী জনতাকে ভেবে দেখা প্রয়োজন। ৪০ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচারের গলাবাজী হচ্ছে নিছক ভোটের রাজনীতি। জনমতকে পক্ষে নিয়ে পুনরায় ভোটের বৈতরনী পার হতে চায় আওয়ামী মহাজোট সরকার। প্রকৃতপক্ষে তারা কোন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরামর্শে মানবতা বিরোধী অপরাধের নামে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ধামাচাপা দিয়েছে। বিচার ট্রাইবুনালের নাম তাই “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল”। নামে আন্তর্জাতিক হলেও কার্যত: এটা দেশের আইনে সম্পূর্ণ দেশীয় ব্যবস্থাপনায় একটি দেশীয় বিচার। কাদের মোল্লার রায়ে আওয়ামী মহাজোটের আপোষ উন্মোচিত হয়ে গেলে তারা পিঠ বাঁচাতে বলছে সরকার আপিল করবে। সংসদে এই রায়ের বিরুদ্ধে কেউ কেউ কথা বলতে গেলে সংসদ উপনেতা ও স্পিকার এ বিষয় কথা বলতে দেয়নি। এতে পরিস্কার হয়ে যায় সরকারের চরিত্র। বিরোধী দল নিরবতার মাধ্যমে সুবিধাবাদী অবস্থান নিয়েছে।

সংগ্রামী বন্ধুগণ,
আওয়ামী মহাজোটসহ শাসক শ্রেণীর কোন বুর্জোয়া সরকারের পক্ষেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা আজ সম্ভব নয়। শ্রেণীগত কারণেই তারা আপোষ করে এসেছে এবং এখনও করছে। এবং বিগত ৪০ বছর ধরে এই বুর্জোয়া শাসক শ্রেণী নিজেরাই মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী। এরা রক্ষীবাহিনী দিয়ে হাজার হাজার বিপ্লবীদের হত্যা করেছিল। অভ্যুত্থান দমনের নামে সাধারণ সেনা সদস্যদের খুন করেছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি না দিয়ে হত্যা-খুন-ধর্ষন চালিয়ে আন্দোলন সংগ্রামকে দমন করছে। তারা বিপ্লবী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ক্রসফায়ারের নামে বিনাবিচারে হত্যার অপরাধে অপরাধী। এ জাতীয় অসংখ্য মানবতা বিরোধী অপরাধে এই শাসক শ্রেণী অপরাধী। এক মানবতা বিরোধী-অপরাধীর দ্বারা আরেক অপরাধীর বিচার হতে পারে না। এই বিচারেও তা প্রকাশিত। বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে যাওয়ার পর ফাসির রায় দিয়ে বীরত্ব দেখানো হয়েছে। আর খুনী কাদের মোল্লা এত এত খুন-ধর্ষণ করায় মাত্র যাবজ্জীবন সাজা হলো। রাজপথে আওয়ামী পুলিশ এবং জামাত-শিবিরের ফুল দেয়া নেয়া চলছে।

অন্যদিকে শাহবাগ স্কোয়ারসহ সারা দেশের জনগণের কি প্রত্যাশা? তাদের রায় হচ্ছে ফাঁসি। কিন্তু শাসক শ্রেণীর আইন তা করতে সক্ষম নয়। তাই জনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

প্রতিবাদী জনগণ,
যারা প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে চান, যারা একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চান। যারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক রাজনীতি চান সেই সব সংগ্রামী জনতার প্রতি আহ্বান-যুদ্ধাপরাধী বিচারের এই প্রহসনকে উন্মোচন করুন, প্রত্যাখান করুন। প্রতারক বিশ্বাসঘাতক শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করুন। শ্রমিক কৃষক ও সাধারণ জনগণের রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হোন। যুদ্ধাপরাধীসহ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের পথকে প্রশস্ত করুন। জনগণের বিজয় অনিবার্য্য।

আওয়াজ তুলুনঃ
* যুদ্ধাপরাধী-মানবতা বিরোধীদের রক্ষাকারী শাসক বড় ধনী শ্রেণীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান!
* বিচার নিয়ে নির্বাচনী রাজনীতি করতে দেয়া হবে না!
* রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবীতে সোচ্চার হোন!

নোট: মুদ্রনজনিত ভুলের কারণে প্রচারপত্রে আওয়াজ তুলুন এর
(২য় পৃষ্ঠার) শেষ শ্লোগানে দাবীতে লেখার পরিবর্তে বিরুদ্ধে শব্দ লেখা, ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা
মোবাইল: ০১৯১৫২২১৯৮০, ০১৯৬১২৫০২৬৭, ফেব্রুয়ারী’১৩
ওয়েব: http://www.andolonpotrika.wordpress.com

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in সংগঠন সংবাদ. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s