দুই দশকে গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে ৭০০ শ্রমিকের মৃত্যু

বুর্জোয়া পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু হওয়ার পর গত দুই দশকে ৭০০ গার্মেন্টস শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেছে ২৫টির মতো। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২১৪টির মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৭০০ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এ তথ্য গার্মেন্টস মালিক সংগঠন বিজিএমইএ এবং অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলোর দেয়া পরিসংখ্যান বলে পত্রিকা সূত্রের দাবি। আর আগুনে পুড়ে ভবন ধ্বসে অন্যবিধ কারণে প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তিন দশকে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার।
এ পর্যন্ত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে এমন কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো সর্বশেষে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু ঘটলো ঢাকার আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টে। সরকারী হিসেবে ১১২ জন এবং বেসরকারী হিসেবে ১২৫ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ১৯৯০ সালে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে সারাকা গার্মেন্টে আগুনে পুড়ে মারা যান ৩০ জন শ্রমিক। ১৯৯০ সালের আগষ্টে গ্লোব নিটিং কারখানায় আগুনে মারা যান ১২ জন শ্রমিক। ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর নরসিংদী চৌধুরী নিটওয়্যার এ্যাণ্ড গার্মেন্ট লিমিটেডে আগুনে পুড়ে মারা যান ৫৩ জন শ্রমিক। ২০০১ সালে ৮ আগষ্ট ঢাকার মিরপুরে মিকো সুয়েটার লিমিটেডে আগুন লাগার পর পদদলিত হয়ে নিহত হন ২৪ জন শ্রমিক। এই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ঢাকার মিরপুরের কাফরুলে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ২৫ জন শ্রমিক। ২০০৪ সালে ৩ মে মিসকো সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের এক গার্মেন্টে আগুন লেগে ৯ জন শ্রমিক মারা যান। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে নরসিংদীর শিবপুরে এক গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৪৮ জন শ্রমিক। ২০০৫ সালে ৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে আগুন লেগে ২২ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রামের কেটিএস কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলে আগুনে ৯১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। একই বছর ৯ ফেব্র“য়ারি গাজিপুরের যমুনা স্পিনিং মিলে আগুনে পুড়ে মারা যান ৬ জন শ্রমিক। একই বছর মার্চ মাসে সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডে আগুনে ৩ জন শ্রমিক মারা যান। ২০১০ সালের ফেব্র“য়ারিতে গজিীপুরের গরীব এ্যাণ্ড গরীব সুয়েটার ফ্যাক্টরীতে অগ্নিকাণ্ডে ২১ জন শ্রমিক মারা যান। একই বছর ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হামীম গ্র“পের গার্মেন্টে আগুনে পড়ে মারা যান ৩০ জন শ্রমিক। এই নির্মম মৃত্যুর শিকার শ্রমিকদের মাঝে বেশিরভাগই নারী শ্রমিক।
বেসরকারী হিসেবে এই তথ্য পাওয়া গেলেও মালিক এবং সরকার সর্বদাই এজাতীয় ঘটনায় লাশ গোপন করে ক্ষতিপূরণ কম দেয়ার জন্য এবং গণবিক্ষোভ নিরসনে। তাজরীন ফ্যাশনে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেসরকারী হিসেবে ১২৫ জন হলেও সরকারী হিসেবে ১১২ জন। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি আগুনে পুড়ে নিহতের সংখ্যা ৬০০’র বেশি। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর এই হিসেবের তারতম্য ঘটে। শ্রমিকদের দাবি যে অতিরঞ্জন নয় তা তাজরীন ফ্যাশনের ক্ষেত্রেই প্রমাণ। তাজরীন ফ্যাশনে কত শ্রমিক পুড়ে মারা গেছেন তার সঠিক হিসেব এখনও মালিক, সরকার প্রকাশ করেনি। তাজরীন ফ্যাশনে কাজ করতেন দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক। এখন কতজন শ্রমিক বেতন-ভাতা নিতে আসছেন বা দিচ্ছেন তার থেকেই নিখোঁজদের হিসেব বের করা সম্ভব। কিন্তু মালিক-সরকার তা করছে না। তাই সরকারী হিসেব যে সঠিক নয় তা পরিষ্কার। পত্রিকায় প্রকাশ তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। কিন্তু বিজিএমইএ মাত্র ৫৫ জনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফাতেমা নামের এক শ্রমিক চিকিৎসাকালেই মারা যান। বাকিদের অবস্থা কি? তারা চিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের বাইরেই থেকে যাবেন। নিহত ৪৩ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দিলেও অচিহ্নিত শ্রমিক পরিবারের ডিএনএ পরীক্ষা চলছে চলবে টালবাহানা। প্রধানমন্ত্রী ও বিজিএমইএ’র ক্ষতিপূরণের ঢাক-ঢোলের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে হতভাগ্য শত শত শ্রমিকের আর্তনাদ। মালিক ও সরকারের প্রতারণা গার্মেন্টসসহ সব পেশার শ্রমিকদের আজ বুঝতে হবে। আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে প্রতারক সরকার, শাসক শ্রেণী ও তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in আন্দোলন ১৩. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s