গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন ও সংগ্রাম

গত শতাব্দীর ’৮০-র দশক থেকে শুরু হওয়া গার্মেন্ট শিল্পের রাতারাতি এতটাই বিকাশ হয় যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গার্মেন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে। বিজিএমইএ সূত্র মতে তাদের তালিকাভুক্ত গার্মেন্টসের সংখ্যাই ৫ হাজার ৬শ’। তাতে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। ছোট-বড় মিলিয়ে আরো অনেক বেশি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এই শ্রমিকদের শতকরা ৮০ জনই হচ্ছেন নারী শ্রমিক।
সাম্রাজ্যবাদের সস্তা শ্রম লুণ্ঠন এবং মালিকদের অতি মুনাফা অর্জনের যাঁতাকলে শ্রমিকরা পিষ্ট হচ্ছেন। রাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৭৬ ভাগ আসে এই গার্মেন্টস শিল্প থেকে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবন চলে নির্মম দুর্বিসহ অবস্থায়। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় শ্রমিকদের দৈন্যদশা পৃথিবীর দেশে দেশে থাকলেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের, বিশেষতঃ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিকরা প্রায় মধ্যযুগীয় দাস প্রথার মধ্যেই রয়ে গেছেন। বুর্জোয়াদের দ্বারা স্বীকৃত আইনও গার্মেন্টস মালিকরা মানছে না। বুর্জোয়া আইনের সুবিধাগুলো থেকেও গার্মেন্টস শ্রমিকরা বঞ্চিত।
তারা বেতন-ভাতা ঠিকমত পাচ্ছেন না। ২৪ নভেম্বর, ’১২-এ আগুনে পুড়ে নিহত-আহত তাজরীন গার্মেন্টের শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতন-ওভার টাইম বকেয়া ছিল। ২৪ নভেম্বরের পর টানা ১০ দিন আন্দোলন-সংগ্রামের পর বিজিএমইএ মাত্র ১২/১৩ শত শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিয়েছে। বাকিদের দিব, দিচ্ছি বলে টালবাহানা করছে। এই শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি, মেডিক্যাল ছুটি দেয়া হয় না। অসুস্থতাজনিত বা অন্য কোন অনিবার্য কারণে একদিন হাজির না থাকলেও বেতন কেটে নেয়। এবং হাজির না থাকার কারণে বেতন আটকে রাখে। স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয় না। বিশেষ কোনো কারণে কোনো শ্রমিক পরপর কয়েকদিন হাজির না থাকলে ছাঁটাই করে অথবা নতুন করে নিয়োগ দেয়, যাতে পুরনো শ্রমিকের সুবিধা (ঈদ বোনাস ইত্যাদি) ভোগ করতে না পারে। রাত ৮/১০টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য হলেও খাতায় হাজিরা তোলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এটা করে বিদেশী বায়ারদের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য। বাস্তবে বিদেশী বায়াররাও যে এই ফাঁকিবাজী জানে না বা বোঝে না তা নয়। দেশী বিদেশী মিলেই তারা এভাবে আইন ‘মেনে’ চলে। মালিকদের ইচ্ছা-খুশিমত ছাঁটাই করে, ছাঁটাই করার সময় পাওনা বেতন-ভাতা দেয়া হয় না। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয় না অধিকাংশ গার্মেন্টসে। প্রসবকালীন তাদের চাকরী হারাতে হয়। অধিকাংশ কারখানায় সন্তান প্রতিপালনের জন্য কোনো ডে-কেয়ার সেন্টার নেই। ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের স্বীকৃতি থাকলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের শ্রম করতে হয় দৈনিক ১২/১৪/১৬ ঘণ্টা। এ ছাড়া হোল নাইটও করতে হয় বাধ্যতামূলক। ওভার টাইম মজুরী দ্বিগুণ করার আইন থাকলেও তা দেয়া হয় না।
মালিকরা শ্রমিক শোষণ করে টাকার পাহাড় গড়লেও গার্মেন্টসে শ্রমিকদের জন্য কোনো সুব্যবস্থা নেই। ভাত খাওয়ার ভাল কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক গার্মেন্টসে ছাদে বা সিঁড়িতে বসে খেতে হয়। ডিউটি শেষে নারী শ্রমিকদের অসম্মানজনকভাবে চেক করা হয়। শ্রমিকদের কারখানার প্রত্যেক তলায় কলাপসিবল গেটে তালাবন্ধ করে রাখা হয়। জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সন্ধ্যার সময় থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে চাপ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রাতেই ঘটে থাকে। রাতে আগুন লাগা, গেট বন্ধ থাকা, অপ্রশস্থ সিঁড়ি, খরচ বাঁচানোর জন্য দুর্বল বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে, অর্থাৎ অব্যবস্থাপনার কারণেই প্রায় ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং বহু শ্রমিক আগুনে পুড়ে আহত-নিহত হন। মালিক এবং সরকারের এর জন্য কোনো দায় নেই। ভবন ধ্বসে, আগুনে পুড়ে শতশত শ্রমিকের মৃত্যু হলেও এ পর্যন্ত কোনো মালিকের শাস্তি পেতে হয়নি।
গার্মেন্টস ব্যবসার শুরুতেই নিুতম মজুরী ছিল ২৫০/৩০০ টাকা। বছরে বছরে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী বহু আন্দোলন ছাড়া কখনই বাড়ে না। আন্দোলনের চাপে গত তিন দশকে কয়েক দফা মজুরী বেড়ে নিুতম মজুরী এখন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার টাকায়। প্রত্যেকবারই শ্রমিকরা আন্দোলন করে বুকের রক্ত ঢেলে মজুরী বৃদ্ধি করতে মালিকদেরকে বাধ্য করেছে। ২০১০ সালে যে মজুরী কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে সেই নিুতম মজুরীও ঠিকমত দিচ্ছে না মালিকরা। শিক্ষানবিশ হিসেবে ৩-৬ মাস পর্যন্ত ২৫০০টাকা করে মজুরী দেয়া হয়। যেসব শ্রমিক পুরনো মজুরী কাঠামোতে তৃতীয় গ্রেডে বেতন পেতেন তাদেরকে ৪র্থ বা ৫ম গ্রেডে বেতন দেয়া হচ্ছে। ওভার টাইমের ভাতা কমিয়ে দিচ্ছে। নাইট বিল কমিয়ে কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বলছে যত সময় লাগুক কাজ করতে হবে, টার্গেট পূরণ করতে হবে। এর জন্য মালিক অতিরিক্ত মজুরী দিচ্ছে না। নতুন মজুরী কাঠামো বাস্তবায়নের নামে শ্রমিকদের উপর শোষণ-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক কারখানায় হাজিরা বোনাস, বিশেষ ভাতা, পারদর্শী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিত। বর্তমানে সেগুলো কমিয়ে দেয়া হয়েছে, বেশির ভাগ কারখানায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সর্বশেষ বেতন বাড়ানোর ছয় মাসের ব্যবধানেই ডলার মূল্যে শ্রমিকদের বেতন কমেছে। জুলাই, ’১০-এ ১ ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু ফেব্র“য়ারি, ’১১-তে এসে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ জুলাই, ’১০-এ যে বেতন ছিল ৪৩ ডলার ছয় মাস পরেই সেটি কমে ৪২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এখন সেই ডলার ৮৫ টাকা প্রায়। অন্যদিকে মজুরী বৃদ্ধির পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাস্তবে মজুরী পূর্বের চেয়েও কমে গেছে। গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের বাসস্থানের কোন ব্যবস্থা না করায় বাড়ী-মালিকরা দফায় দফায় বাসা-ভাড়া বাড়িয়ে শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরীর বড় অংশই আত্মসাৎ করে নিয়েছে। এভাবে মজুরী বৃদ্ধি শ্রমিকদের কোন কাজেই লাগেনি। অন্যদিকে বিবিধভাবেই নিুতম মজুরী ৩ হাজার টাকা করা হলেও শ্রমিকরা অনেকেই পাচ্ছেন তারও কম। এভাবে মালিক সমিতি বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয় এক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এসব অভিযোগ শ্রমিক নেতারা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে জানালেও এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা সরকারপক্ষ নেয়নি।
২০১০-এর জুলাই-এ যে মজুরী কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তা বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে কম। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মজুরী প্রতি ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬৮ সেন্ট। অর্থাৎ বাংলাদেশের ৩৯ টাকা থেকে ৪৮ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ১৪ টাকা ৪২ পয়সা। অথচ বাংলাদেশের গার্মেন্টে মালিকদের মুনাফার হার ৪৩.১০ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৩১ শতাংশ, ভারতে ১১.৮ শতাংশ, ইন্দেনেশিয়ায় ১০ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৬.৫ শতাংশ, নেপালে ৪.৪ শতাংশ, এবং চীনে ৩.২ শতাংশ। এতে দেখা যায় বাংলাদেশী মালিকরা অনেক বেশি মুনাফা করলেও শ্রমিকদের সবচেয়ে কম মজুরী দেয়। আর এ কারণেই শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
২০১০ সালে নতুন মজুরী কাঠামোর পর সরকার দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় নিত্য পণ্যের মূল্য, বাড়ি ভাড়া, পরিবহন ভাড়া গত আড়াই বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। যার পরিসংখ্যান এখানে দেয়ার প্রয়োজন নেই। শ্রমিক ও জনতা প্রত্যক্ষ জীবন থেকেই বুঝতে পারছেন। বস্তিতে ছোট এক রুমের ভাড়া ৩ হাজার টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না ঢাকা শহরে। তা-ও ৫/৭টা পরিবার মিলে এক বাথরুম, ১/২টা টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। রাত ৯/১০টায় ঘরে ফিরে রান্না করে খেয়ে রাত ১২টার আগে ঘুমাতে যাওয়ার উপায় নেই। আবার ভোর ৫টা থেকে লাইন ধরে গোসল, রান্না, খাওয়া সেরে সকাল ৮টার আগে কারখানায় পৌঁছাতে হয়। ১মিনিট লেট হলেই হাজিরা বোনাস কেটে নেয়া হয়। এরকম ঘর ভাড়া দিতেই ৩ হাজার টাকা চলে যায়। ওভার টাইমের টাকা দিয়ে সারা মাসের খাওয়া, চিকিৎসা, কাপড় ইত্যাদি খরচ চালাতে হয়। উপরন্তু মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানতো রয়েছেই। উপায়ান্তর না পেয়ে শ্রমিকরা একরুমে ৪/৫ জন গাদাগাদি করে আলো-বাতাসহীন দুর্গন্ধযুক্ত ঘরে বাস করেন। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে অন্যদের দায়িত্ব পালন করেন। এই কারণেই শ্রমিকরা ওভার টাইম করতে চান। তারা ন্যয্য মজুরী পেলে এই অমানুষিক পরিশ্রম তারা করতেন না। শ্রমিকদের অনাবিল দাম্পত্য জীবন, বিনোদন বলতে কিছু নেই। ভাড়া বাড়িতেও শ্রমিকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। সন্তান-ভাই-বোনদের নিয়ে বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না বাড়িওয়ালারা। তারা তথাকথিত নিরিবিলির জন্য ছোট পরিবার ভাড়া দিয়ে থাকেন। আগামীতে বাড়ি ভাড়া, দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে, কারণ হাসিনা সরকার আবারো জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে। তাই, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বর্তমান মজুরীতে কোনো মতেই চলছে না। মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনে ফের শ্রমিকদের নামতে হবে। কারণ মালিকরা আন্দোলন ছাড়া বেতন বৃদ্ধি করবে না।
কিন্তু শ্রমিক আন্দোলন হলে বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সরকার-মালিক মিলে কোরাসে গাইতে থাকে এটি উসকানি, নাশকতা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বলে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা বা সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী দেশগুলো বাজার দখলের জন্য নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি এবং ষড়যন্ত্র করে থাকে। কথা হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকারী দেশ ও ব্যক্তিদের নাম সরকার কখনই প্রকাশ করে না। এবারও তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করেছে। আর এর বলি করা হয়েছে শ্রমিকদেরই। শ্রমিক সুমি বেগম ও জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে, রিমাণ্ডে পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য কোনো তদন্ত ছাড়াই প্রতিপক্ষ জামাতকে দায়ী করেছে। মালিকদের রক্ষার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করা হয়। মালিকদের জানমাল রক্ষা এবং শ্রমিক বিক্ষোভকে দমনের জন্য প্রধান মন্ত্রী ২৪ নভেম্বর রাতেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে। অথচ জীবিত শ্রমিকদের বেতন দিতে, তাদের ছাঁটাই বন্ধ করতে, তাদের চাকরীর নিশ্চয়তার কোনো ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী করেনি। শ্রমিকদের প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন দমনে প্রত্যেক সরকারই এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বুর্জোয়া আইনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার বিধান থাকলেও মালিকরা সে অধিকার দিচ্ছে না। ইউনিয়ন করতে গেলে বা কোনো ইউনিয়নের সাথে যুক্ত আছে জানতে পারলে সে শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রমিকদের উপর মালিকদের এই মধ্যযুগীয় শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোনো সরকারই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, নিচ্ছে না। উপরন্তু হাসিনা সরকার শ্রমিক দমনে ইণ্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করেছে।
আজকে শ্রমিকদের এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে, বুর্জোয়া শ্রম আইন, বুর্জোয়া আদালত, সরকার, এদের রাষ্ট্রব্যবস্থা মধ্যযুগীয় এই দাসত্ব থেকে তাদের মুক্তি দেবে না। প্রতিবার মজুরী বৃদ্ধি রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমেই করতে হয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যার কোনো সমাধানই হচ্ছে না। তাই, শ্রমিক শ্রেণীকে সাম্রাজ্যবাদ, দালাল শাসক শ্রেণী তথা মালিক শ্রেণীর শোষণ-নির্যাতন-লাঞ্ছনার ব্যবস্থা থেকে মুক্তির জন্য লড়তে হবে। লড়তে হবে নিজেদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা নেবার জন্য। এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে পুঁজিবাদের বদলে সমাজতন্ত্র। বুর্জোয়া আইন, বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদের এবং শ্রমিক শ্রেণীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিপ্লবী রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আশু দাবি-দাওয়ার আন্দোলন যা নাকি বিপ্লবী রাজনীতিকে সহায়তা করে এমন ধারার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে হবে। যে ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করবে। যার নেতারা টাকার বিনিময়ে মালিকদের, সরকার তথা শাসক শ্রেণীর কাছে বিক্রি হবে না। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরে লাগাতার সংগ্রাম চালাবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। কেবল বিপ্লবী ধারার রাজনীতি, এবং তার সমর্থনে বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়নই শ্রমিক শ্রেণীকে মুক্তির দিকে এগিয়ে নিতে পারে।

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in আন্দোলন ১৩. Bookmark the permalink.

Leave a comment