সিরিয়ায় গণউত্থানের প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হতে চলছে। ইতিমধ্যেই ২০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। এই গণবিদ্রোহে যুক্ত হয়েছেন আসাদের পারিবারিক ফ্যাসিস্ট শাসনে ক্ষুব্ধ লক্ষ লক্ষ জনগণ। এর সাথে প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গী ইসলামী সংগঠন, মার্কিনী পুরনো দালাল, শাসক আসাদ পরিবারের সাথে দ্বন্দ্বের প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া অংশ। এই সকল আসাদ বিরোধী শক্তিকে সমন্বিত করার নেতৃত্ব দিচ্ছে যুদ্ধবাজ মার্কিনের নেতৃত্বে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ।
আসাদ সরকারকে উচ্ছেদের মার্কিনী সকল আয়োজন সম্পন্ন। সিরিয়ার বেশ কয়েকজন জেনারেলসহ সেনাবাহিনীর বহু সদস্য আসাদকে ত্যাগ ক’রে “ফ্রি সিরিয়ান আর্মি” গঠন করেছে। অনেক রাষ্ট্রদূত সিরিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। প্রধানমন্ত্রী পক্ষ ত্যাগ করেছে। রাজধানীতে বোমা বিস্ফোরণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ কয়েক মন্ত্রী নিহত হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বাণিজ্য নগরী আলেপ্পো শহরের দখল নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে। আসাদের সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। লক্ষ লক্ষ জনগণ শরণার্থী হয়ে পড়েছেন- দেশ ত্যাগ করেছেন।
আরব বিশ্বে পরিবারতন্ত্র-রাজতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিউনিসিয়া থেকে যে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল তাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজেদের অনুকূলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তিউনিসিয়া ও মিশরে মার্কিনী পুরনো বিশ্বস্থ দালালদের সরিয়ে সেনাবাহিনী ও সুশীল সমাজকে মদদ দিয়ে কথিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেছে। সৌদি আরব-ইয়েমেন-বাহরাইনে বিদ্রোহীদের উপর দমন-নির্যাতন চালিয়ে মার্কিনী নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে। আর মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে পুরনো শত্রু লিবিয়ার গাদ্দাফিকে হটিয়ে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দালাল বুর্জোয়া সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন সিরিয়া দখলের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বহুবিধ লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে। তুরস্কের মাধ্যমে সামরিক অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে।
এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে সিরিয়ায় অর্থনৈতিক অবরোধ, পার্শ্ববর্তী মার্কিনী দালাল তুরস্ক-কাতার-সৌদি আরবের মাধ্যমে নানাবিধ চাপ দিচ্ছে। বিশেষত সৌদি আরবের সহায়তায় সিরিয়ার সুন্নী মুসলমানদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করছে।
ইরাক-আফগানিস্তান-লিবিয়া দখলের পর মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একক আধিপত্য কায়েমের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে সিরিয়া। এক সময়ের রাশিয়ান ব্লকে থাকা সিরিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকার ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে ইরানকে ঘিরে ফেলা। এভাবে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার দোসর ইসরাইলকে শক্তিশালী ও নিরাপদ করা। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি রাশিয়া ও নতুন শক্তি পুঁজিবাদী চীনের প্রভাব-আধিপত্যের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দেয়া।
সিরিয়ায় আগ্রাসনকে কেন্দ্র ক’রে মার্কিন বনাম চীন-রাশিয়ার দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে তীব্র হয়ে উঠেছে। সিরিয়ায় জাতিসংঘ কর্র্তৃক অবরোধ আরোপের জন্য মার্কিনী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চীন-রাশিয়া ভেটো দিয়েছে। রাশিয়া যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে। যে কারণে গাদ্দাফীর মত করে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের জন্য সহজ হচ্ছে না।
তবে সাম্রাজ্যবাদীদের এই ষড়যন্ত্রের কারণে আসাদের উচ্ছেদ হলেও সিরিয়ার জনগণের সত্যিকার মুক্তি হবে না। সিরিয়াসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের গণসংগ্রামে ও গণ-উত্থানে প্রকৃত বিপ্লবী মতবাদ ও কর্মসূচিকে সামনে আনাটাই এখন একমাত্র সঠিক করণীয়।