দেশীয়
১। ফ্যাসিবাদ অভিমুখে রাষ্ট্র ও সরকার :
২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন মহাজোট সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনী র্(যাব, পুলিশ, আর্মি) এবং দলীয় কেডার (মাস্তান) বাহিনীর উপর নির্ভর করে এবং সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী প্রভুদের মদদে ফ্যাসিবাদের অভিমুখে দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
তারা বিচার-বহির্ভূত হত্যা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি গুম হত্যার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। সম্প্রতি বিদেশী পত্রিকার খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতের দেরাদুনে ট্রেনিং দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী কেডারদের দিয়ে “১০০ ক্রুসেডার” নামে সরকার খুনি বাহিনী গঠন করেছে। এদের খুন, গুম, গুপ্তহত্যা থেকে এমনকি বুর্জোয়া বিরোধী পক্ষও রেহাই পাচ্ছে না। আলোচিত সাংবাদিক হত্যা ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর হত্যা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করছে।
তারা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের সংবিধানের সমালোচনাকে মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের জাতীয় পরিচয়কে পিষে মেরে ফেলতে চাইছে। মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে রাষ্ট্রধর্মকে সংবিধানে যুক্ত করে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের পথ খুলে রেখেছে। এমনকি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রদ করে তারা শাসক শ্রেণীর অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হাতবদলের পথও প্রায় রুদ্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তারা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন, বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, এমনকি বুর্জোয়া প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রামকেও পুলিশর্-যাব দ্বারা নির্মমভাবে দমন করছে। ঢাকার মুক্তাঙ্গনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করেছে। ২০১০ ও ‘১২ সালে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন, নৌ-শ্রমিক ধর্মঘট, কৃষকদের জমি রক্ষা আন্দোলন লাঠি, বুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে খুন, জখম করে। শত সহস্র শ্রমিক ও কৃষক-জনগণের নামে পাইকারী মিথ্যা মামলা করে। গণহারে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। শ্রমিক দমনে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করেছে।
তারা তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে বুর্জোয়া বিরোধী পক্ষকেও আইনী হত্যার দিকে এগিয়ে চলেছে।
এসবই রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদ অভিমুখে মরিয়া যাত্রার প্রকাশ।
মহাজোট সরকারের নেতৃত্বে এই সব রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ সম্মেলন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসাথে সকল বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল সংগঠন, শক্তি, ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংগঠনকে ও সর্বস্তরের জনগণকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
২। ভারতের সম্প্রসারণবাদী অপতৎপরতা এবং সরকারের নগ্ন দেশদ্রোহীতামূলক দালালী :
২০১০ সালের জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে হাসিনা-মনমোহন সন্ত্রাস দমনসহ গণবিরোধী চুক্তি করে। এর পূর্বেই ভারতের আসামের জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে ভারতের লাঠিয়ালগিরি করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যের জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রামকে দমনের জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে প্রতিহত করার জন্য এবং বহুবিধ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশে সরকার বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট নামের করিডোর প্রদান করে। যা দেশের চলমান আনুষ্ঠানিক সার্বভৌমত্বকেও হুমকিতে ফেলেছে। সরকার ভারতের জন্য বাংলাদেশের ২টি সমুদ্র বন্দর, ১টি নদী বন্দর, রেলপথ, সড়কপথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, সিলেটের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলের কৃষি ও জীব-বৈচিত্রের ধ্বংসকারী ভারতের টিপাইমুখ বাধ নির্মাণকে মূলতঃ অনুমোদন করেছে এ সরকার। ভারতের সমুদ্র আগ্রাসনে সরকার নতজানু ভূমিকা পালন করছে। অর্থনৈতিকভাবে বিপুল সম্ভাবনার টেলিখাত সরকার ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। বিদ্যুৎখাতেও চলছে ষড়যন্ত্র। সম্প্রতি ভারতের দানবসদৃশ সাহারা গ্রুপকে সরকার নগর-নির্মাণের নামে সুবিশাল বাণিজ্য তাদের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে দেশের উপর ভারতের থাবা আরো শক্ত করার পায়তারা করছে। ভারতের বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা, নিপীড়ন, নিগ্রহে সরকার নির্বিকার। বরং সর্বস্তরের জনগণের উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে তিরস্কার করে সরকারের মন্ত্রীরা ভারতের পক্ষে সাফাই গাইছে।
এ সম্মেলন সরকারের ভারতের দালালী ও নতজানু ভূমিকাকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসাথে ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
৩। কৃষি উপকরণ ও কৃষি পণ্যের মূল্য সম্পর্কে :
সাম্রাজ্যবাদের দালাল বিগত প্রতিটি সরকারের ন্যায় মহাজোট সরকার আমলেও কৃষককে কৃষি উপকরণ উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। এ সরকার বিনামূল্যে সার দেয়ার কথা বলে এখন ইউরিয়া সারের দাম বার বার বাড়াচ্ছে। জ্বালানী তেল, বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। অথচ কৃষক কয়েকবছর ধরেই একেকবার একেক ফসলে মার খাচ্ছেন। একবার আলু, পরের বছর পাট, এ বছর ধান কৃষক নিতান্ত কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ, মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া, আমলা, ফড়িয়া ব্যবসায়ী, পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো, সুদখোর মহাজনরা। কৃষক নিঃস্ব ও জমিহারা হচ্ছেন।
এ সম্মেলন কৃষকের মু্িক্তর জন্য তাদেরকে বিপ্লবের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।
৪। শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আন্দোলন সম্পর্কে :
সম্প্রতি সাভারের আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন, খুলনার রামপালের কৃষকদের ভূমি রক্ষা আন্দোলন, যশোহরের মনিরামপুর উপজেলার বিল কপালিয়াবাসীদের শেষ সম্বল বিলের জমি রক্ষা আন্দোলন, চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত ও মাঝের চরে সরকারের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে কৃষক জনগণের জমি ও ভিটে থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণের আন্দোলনকে এ সম্মেলন সর্বাত্মক সমর্থন করছে।
এ সম্মেলন সম্প্রতি ভারতের সাহারা গ্রুপকে ১ লক্ষ একর কৃষি জমি প্রদানের সরকারী সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। অনতিবিলম্বে এই কৃষক-হত্যাকারী প্রজেক্ট বাতিল করার জোর দাবী জানাচ্ছে এবং সারা দেশের জনগণকে এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
সম্মেলন গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে।
সম্মেলন ফুলবাড়ী, বড়পুকুরিয়া ও সুনেত্র এলাকার জনআন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছে।
৫। তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কে :
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার জুন/১১-এ গভীর সমুদ্রের ১০নং ও ১১নং ব্লক মার্কিন কোম্পানী কনোকো ফিলিপসকে ইজারা দেয়ার এক দাসখতমূলক চুক্তি করেছে।
এছাড়া ঐ বছরের মে মাসে অগভীর সমুদ্রের ১৬নং ব্লকের গ্যাস অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানী সান্তোসকে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির অনুমোদন দেয়। এ সরকার সুনেত্র গ্যাস ক্ষেত্রও সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার পায়তারা করছে। দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ার কয়লাখনি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন ও ভূমি অধিগ্রহণের পায়তারা করছে। ফুলবাড়ীর পুরনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
এভাবে মহাজোট সরকার দেশের খনিজ সম্পদ বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দিয়ে নিজেরা কমিশন খেয়ে দেশ ও জনগণের সর্বনাশ করছে।
এইসব গণবিরোধী দেশদ্রোহী চুক্তি বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান করছে এই সম্মেলন।
৬। জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের উপর নিপীড়ন :
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণ ও সারাদেশের আদিবাসী জনগণকে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে এই সরকার। পাহাড়ে সেনা শাসন অব্যাহত রেখেছে। জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের পৃথক জাতিসত্ত্বাকে সাংবিধানিকভাবেই অস্বীকার করা হয়েছে। এ সরকার পাহাড়ী জনগণের মাঝে দালাল সৃষ্টি করছে, তাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সৃষ্টি করছে। বাঙালি-পাহাড়িদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে হত্যা-গুম-জখম-জ্বালাও-পোড়াও বর্বর নীতি কার্যকর করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ও সারা দেশের আদিবাসী তথা জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের ভূমির অধিকারসহ সকল ন্যায্য সংগ্রামকে এ সম্মেলন সমর্থন করছে।
৭। রোহিঙ্গা সমস্যা :
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদী সরকার উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি এক নির্মম অমানবিক আচরণ করে চলেছে, যাকে এ সম্মেলন কঠোরভাবে নিন্দা জানায়। এবং দেশের জনগণকে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
দেশীয় ও বৈদেশিক প্রতিক্রিয়াশীলদের একাংশ মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রতিক্রিয়াশীল পথে এ সমস্যাকে তুলে ধরছে। যাকে আমরা বিরোধিতা করি। মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলা ব্যতীত রোহিঙ্গা জনগণের মুক্তির পথ নেই।
৮। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি :
এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫ বার জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং কয়েক দফা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে দফায় দফায় বাড়ীভাড়া, পরিবহন ভাড়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এছাড়া শাসক শ্রেণীর ফটকাবাজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি করে। এই সরকার এই ফটকাবাজ ব্যবসায়ীদেরই স্বার্থ রক্ষা করে। কিন্তু জনগণকে প্রতারণা করার জন্য বাজার মনিটরিং-এর আয়োজন করে। ভারতে তেল পাচার রোধ ইত্যাদি কথা বলে।
এ সম্মেলন জনগণের এই দুর্ভোগে গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করছে। জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে চাল ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন।
৯। শিক্ষানীতি :
বিশ্বব্যাংক, এডিবি’র নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাকাঠামো সাজানো হচ্ছে।
ধর্মনিরপেক্ষতার বুলিওয়ালা এই সরকার একটি ধর্মবাদী, বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে নতুন শিক্ষানীতিতে। ৫ম শ্রেণী ও ৮ম শ্রেণীতে বোর্ড পরীক্ষা, প্রাইমারী তুলে দিয়ে জুনিয়র স্কুল স্থাপন বা এসএসসি তুলে দিয়ে এইচএসসিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা- এসবই শিক্ষা সংকোচনের নীতি ছাড়া কিছু নয়।
শিক্ষার অবিরত বেসরকারীকরণ ও বানিজ্যিকিকরণ সাধারণ জনগণের সন্তানদের শিক্ষাকে আরো দুরুহ করে তুলছে।
সম্প্রতি কোচিং নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে শিক্ষাকে উন্নত করার নামে দুর্নীতি বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের নতুনতর সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
ডিজিটালের নামে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগণের প্রবেশকে আরো কঠিন করে তুলবে এবং সাম্রাজ্যবাদী ও তার দালাল দেশীয় বুর্জোয়াদের কম্পিউটার বাণিজ্যকে সেবা করবে।
এ সম্মেলন বুর্জোয়া এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করছে। শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী জনগণের সন্তানদের গণমুখী প্রগতিশীল, বিজ্ঞানভিত্তিক উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য লড়াই করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান ও এজন্য প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে সমর্থন করছে।
১০। রিক্সা, বস্তি, হকার উচ্ছেদ :
পূর্বের সরকারগুলোর মতই মহাজোট সরকার রিক্সা, বস্তি, হকার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ বছরের প্রথম দিকে ঢাকার মহাখালী করাইল বস্তি উচ্ছেদ করেছে। মে মাসে নারায়ণগঞ্জের রেল লাইনের বস্তি উচ্ছেদ বাস্তুচ্যুত জনগণেকে পথে নামিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে হকার উচ্ছেদ করছে। প্রায়ই বস্তিতে আগুন লাগিয়ে বস্তি উচ্ছেদের বর্বর কর্মসূচি রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণী অব্যাহতভাবে চালাচ্ছে।
এ সম্মেলন হকার, বস্তিবাসী ও রিঙ্া চালকদের রাষ্ট্রের নির্মম বর্বরোচিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখে দরিদ্র জনগণের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
১১। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার :
মহাজোট সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে প্রতিপক্ষ জামাত-বিএনপি’র কিছু নেতার বিচারের আয়োজন করেছে। একেই যুদ্ধাপরাধী বিচার বলে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচার চালিয়ে জনগণকে প্রতারিত করছে। এটা তারা করছে স্রেফ প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করার জন্য।
আমরা সর্বস্তরের জনগণকে এই প্রহসনের বিষয়ে সচেতন হবার আহ্বান জানাই। আমরা ‘৭১-এর ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে আওয়ামী-মুজিব সরকার কর্তৃক ক্ষমা করে দেবার দেশদ্রোহীতাকে উন্মোচনের আহ্বান জানাই। একইসাথে আমরা ‘৭১-সালে এদেশের যারা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে শাসক শ্রেণী, রাষ্ট্র ও সকল বুর্জোয়া পার্টি কর্তৃক ৪০ বছর ধরে রক্ষা করার তীব্র নিন্দা জানাই ও তার উন্মোচনের আহ্বান জানাই। আমরা ‘৭১-সালের এইসব খুনী অপরাধীসহ শাসক শ্রেণীর সকল গোষ্ঠী, দল, সরকার ও রাষ্ট্র বিগত ৪০ বছর ধরে যে চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ও করে চলেছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার ও তাদের সকলকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানাই।
১২। সরকার, রাষ্ট্র, শাসক শ্রেণীর দুর্নীতি :
শাসক শ্রেণীর মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু ক’রে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই দুর্নীতি এখন খোলাখুলি বিষয়। এটা এখন সাধারণ স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিদিন দুর্নীতির খবর পত্রিকার পাতা ভরে থাকে। যেমন, ইভিএম ক্রয়ে হুদা কমিশনের দুর্নীতির মহোৎসব, চিড়িয়াখানার ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ বেহাত, কুইক রেন্টালে লুটপাট… … …। সম্প্রতি পদ্মা সেতু নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করছে। সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনের এপিএস-এর গাড়ীতে বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে ধরা পড়া সরকার ধামাচাপা দিয়েছে ড্রাইভারকে গুম করে। শেয়ার বাজারে দুর্নীতির কারণে ৩৩ লক্ষ মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত জনগণ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। দুর্নীতি সমাজে মহামারীর মতো বিরাজ করছে। প্রকৃত দুর্নীতির খুব কম অংশই প্রকাশিত হয়। এবং এর সাথে সরকার ও রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের যারা জড়িত তাদের কথাও কমই প্রকাশিত হয়। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি নয়, সমগ্র সমাজ-ব্যবস্থাটাই দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত, যার প্রকৃত হোতা এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও তাদের বৈদেশিক প্রভুরা।
এ সম্মেলন সরকার, রাষ্ট্র ও এই ব্যবস্থার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানো, তার প্রকৃত কারণ উন্মোচন এবং দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার করছে।
১৩। দেশ ও গণবিরোধী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন :
শাসক শ্রেণীর প্রত্যেক সরকারই ভারতের টিভি চ্যানেল, হিন্দি ছবি, অশ্লীল সিডির মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী ও ব্যাপক জনগণকে অপসংস্কৃতিতে কলুষিত করছে। মহাজোট সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর এক্ষেত্রে আরো নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে কনসার্ট বা বিভিন্ন ধরনের শো-এর নামে প্রকাশ্যে ভারতীয় অপসংস্কৃতি আমদানীর মাধ্যমে। এছাড়া দেশীয় শিল্পের নিম্নমানের অজুহাতে ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীল সিনেমার কাছে দেশের বাজার উন্মুক্ত করে দেবার ষড়যন্ত্র করছে।
এর সাথে চলমান রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
এ সম্মেলন সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সকল দেশপ্রেমিক সাংস্কৃতিক কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণকে অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
১৪। দুর্ঘটনায় মৃত্যু :
বুর্জোয়া শাসক শ্রেণীর রাষ্ট্রব্যবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটা এবং প্রতি বছর শত সহস্র মানুষ মারা যাওয়া, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গু হয়ে যাওয়া এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদহানি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২/৪/১০ জন করে, এমনকি আরো বহুসংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছেন। গত বছর (১১/৭/’১১) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন স্কুল ছাত্রের মৃত্যু ঘটে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিশুক মনির এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। প্রতি বছর লঞ্চডুবিতে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন এবং প্রায় প্রতি বছর পাহাড় ধ্বসেও শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন। এ বছরও চট্টগ্রামে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। কলে-কারখানায়-নির্মাণ শিল্পে দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত শ্রমিক নিহত-আহত হচ্ছেন।
সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার অংশ হিসেবে আমাদের দেশের বড় বুর্জোয়া শাসক শ্রেণী ও রাষ্ট্র অব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ধ্বংস, মুনাফা লুটা, দুর্নীতি এবং লুটপাটের মাধ্যমে সর্বত্র এক নৈরাজ্যিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এসবের ফলশ্রুতি হিসেবেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। যাকে দুর্ঘটনা না বলাই ভাল।
সম্মেলন এইসব দুর্ঘটনায় নিহত আহতদের প্রতি সহমর্মীতা প্রকাশ করছে এবং এর জন্য আসল দায়ী এই ব্যবস্থা ও তার ধারকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছে।
বৈদেশিক
১। অপারেশন গ্রিনহান্ট :
ভারতের মাওবাদী বিপ্লবী পার্টির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা শ্রমিক-কৃষক-আদিবাসী জনগণের বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমনের জন্য ভারতের শাসক শ্রেণী বিগত কয়েকবছর যাবত “অপারেশন ্িরগ্রনহান্ট” নামের এক বর্বর সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। এই দমনাভিযানে মাওবাদী শীর্ষ নেতা ক.আজাদ ও ক.কিষেণজিকে ভুয়া ক্রসফায়ার তারা হত্যা করে। সম্প্রতি ছত্রিশগড়ে বিজাপুরের বাসিন্দা ২২ জন আদিবাসীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে মাওবাদী গেরিলা বলে প্রচার চালায়।
এ সম্মেলন ভারতীয় শাসক শ্রেণীর এই বর্বরোচিত দমনাভিযান ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
২। ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন আন্দোলন :
গত দেড়/দুই বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক নতুন ধরনের গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে। যা সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে সৃষ্ট আর্থিক মন্দা থেকে উদ্ভূত বুর্জোয়া শাসকদের বিভিন্ন গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের জনগণ বিশেষত তরুণরা এ বিক্ষোভ-বিদ্রোহ গড়ে তুলছেন।
এ সম্মেলন এই সব আন্দোলনকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে।
৩। কাশ্মীর ও ভারতের অন্যান্য নিপীড়িত জাতিসমূহের স্বাধীনতা আন্দোলন :
ভারতের কাশ্মীর এবং আসাম ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিপীড়িত জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামকে এ সম্মেলন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে।
৪। আরব বসন্ত :
বিগত দুই বছরে আরব বসন্ত নামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আন্দোলন একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদের দালাল ও স্বৈরাচারী শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তেমনি বিপ্লবী কর্মসূচি ও রাজনৈতিক পার্টির অভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের নতুন দালালদের সেসব জায়গায় বসানোর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তবুও এ আন্দোলনের ঢেউ এখনো প্রতিক্রিয়াশীলদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা যাচ্ছে।
সিরিয়ায় এ আন্দোলনে দৃশ্যত পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা মদদ দিচ্ছে, আর একে ঘিরে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে দেখা যাচ্ছে। একদিকে রাশিয়া ও চীন, তার সমর্থনে ইরান, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা প্রভৃতি, অন্যদিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দালাল সরকারগুলো, বিশেষত ইসরাইল- এভাবে তীব্র দ্বন্দ্ব গড়ে উঠেছে।
জনগণের সংগ্রামকে নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের এই দরাদরি ও রেষারেষি, মারামারি ও যুদ্ধকে আমরা বিরোধিতা করছি।
৫। নেপাল পরিস্থিতি :
নেপালে ভট্টরাই-প্রচন্ডের নেতৃত্বে বিপ্লবী পার্টির একাংশ বিপ্লবের ফলকে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীর হাতে তুলে দিয়েছে। এবং এভাবে বিপ্লবের সাময়িক পরাজয় ডেকে এনেছে। আমরা এই বিপ্লববিরোধী ষড়যন্ত্রকে তীব্র নিন্দা জানাই।
অন্যদিকে বিপ্লবী পার্টির একটি বড় অংশ এই ষড়যন্ত্রের জাল অবশেষে ছিন্ন করে নতুন একটি বিপ্লবী পার্টি গঠন করে নতুনভাবে এগিয়ে চলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা নেপালের বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক শক্তি ও নিপীড়িত জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামকে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার সফলতা কামনা করি।