১৪ জুলাই, ২০১২- এ দেশের বিপ্লবী ধারার গণসংগঠন নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র ১ম জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় “প্রস্তুতি কমিটি” ঢাকার পুরানা পল্টন শহীদ তাজুল মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলন উদ্বোধন করা হয় সকাল ১১টায়। উদ্বোধন করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সহ-আহ্বায়ক সাইফুজ্জামান বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জাফর হোসেন। পরিচালনা করেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শাহজাহান সরকার।
সম্মেলনের উদ্বোধনের পর প্রথম পর্বের শুরুতেই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ ও প্রয়াত নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
দেশীয় শহীদ ও প্রয়াত কমরেড যাদের নাম উল্লেখ করা হয় তারা হচ্ছেন- নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক প্রয়াত কমরেড শিবলী কাইয়ুম, সহ-আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, সক্রিয় কর্মী কমরেড আছমত, এবং সক্রিয় শুভানুধ্যায়ী ময়মনসিংহের শাহজাহান মুহুরী। মাওবাদী আন্দোলনের নেতা শহীদ কমরেড ডাঃ মিজানুর রহমান টুটুল, কমরেড কামরুল মাষ্টার, কমরেড মোফাখ্খার চৌধুরী, কমরেড আরিফ। প্রয়াত মাওবাদী নেতা কমরেড সুলতান হাফেজ ও ননী দত্ত। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ সাইফুল্লাহ লস্কর।
আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা কমরেড আজাদ ও কমরেড কিষেণজী এবং ফিলিপাইনের প্রয়াত নেতা কমরেড কা.রজার।
এ ছাড়া ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, তুরস্কসহ দেশী-বিদেশী বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে জানা-অজানা শহীদ নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রতি শদ্ধা নিবেদন করা হয়।
* এর পর সভাপতির সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম পর্বের কাজ শুরু হয়।
প্রথম পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র সদস্য সংগঠন বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সংগঠক কমরেড তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ খান, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, শহীদ বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক স্মৃতি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান ফকরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি মোঃ ইয়াসিন, সংস্কৃতির নয়া সেতু’র প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক জাহিদ হাসান মাহমুদ, গণমুক্তির গানের দলের লিসা, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহম্মদ, ইউপিডিএফ প্রতিনিধি অঙ্গীয় মারমা, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ম. নূরুন্নবী প্রমুখ।
* দুপুর ২-৩০ মি.-এ প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ও দুপুরের খাবারের বিরতি দেয়া হয়। সময় স্বল্পতার কারণে খাবারের সময়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কমরেড বিপ্লবী গান পরিবেশন করেন।
* দুপুর ৩-৩০মি.-এ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। এই পর্বে ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি সংশোধন-সংযোজন, গঠনতন্ত্র, রাজনৈতিক প্রস্তাবাবলী ও সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করা হয়। প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকগণ প্রাণবন্ত আলোচনা-পর্যালোচনা ও মতামত প্রদানের মধ্য দিয়ে দলিলপত্র গ্রহণ করেন। সময় স্বল্পতার কারণে সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্টের উপর আলোচনা করা যায়নি। সম্মেলন নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটির উপর দলিলটির পর্যালোচনা ও গ্রহণের দায়িত্ব অর্পণ করে।
এর পর জাতীয় কমিটি নির্বাচন পর্ব শুরু হয়। শুরুতে পূর্বের জাতীয় আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং নতুন জাতীয় কমিটির প্যানেল পেশ করা হয়। পেশকৃত প্যানেলের কোন কোন সদস্যের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি প্রতিনিধিগণের একাংশ উত্থাপন করেন এবং এর উপর আলোচনা-বিতর্ক হয়। তবে এই সকল প্যানেল-সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হন। অন্যরা সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। সম্মেলন কমরেড জাফর হোসেনকে সভাপতি এবং কমরেড সাইফুজ্জামান বুলবুল, মোস্তাক আহমদ মনি, শামীম পারভেজ এবং শাহজাহান সরকারকে সহ-সভাপতি ক’রে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি নির্বাচন করে।
জাতীয় কমিটি নির্বাচন শেষে কমিটির সদস্যগণ মঞ্চে সমবেত হন এবং প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক এবং কমিটি সদস্যদের পরস্পরের সাথে পরিচিত হন।
সবশেষে নবনির্বাচিত সভাপতি জাফর হোসেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৮ টায় সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
* সম্মেলনে রাজশাহী, পাবনা (চাটমোহর উপজেলা), নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বরিশাল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী ও ঢাকা জেলার প্রতিনিধি/পর্যবেক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। খুলনা, বাগেরহাট, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, পাবনা (সদর) জেলার প্রতিনিধি/পর্যবেক্ষকগণ অসুস্থতাসহ বিবিধ কারণে সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি।
প্রতিনিধি/পর্যবেক্ষক ও অতিথিসহ দেড়শতাধিক লোক সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন।
মাওবাদী নেতা শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার ও মনিরুজ্জামান তারা, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীক শহীদ কমরেড আসাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কৃষক-জননেতা মাওলানা ভাসানীর ছবিসহ ব্যানার, ফেষ্টুন ও পোষ্টার দ্বারা বর্ণাঢ্য সাজে হলরুম সাজানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে আন্দোলন প্রকাশনার পক্ষ থেকে একটি বুকস্টল সম্মেলন কক্ষে বসেছিল।
নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র নেতা-কর্মীদের শ্রম-ঘামে, সহানুভূতিশীল, সমর্থক ও বিভিন্ন স্তরের জনগণের আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা এবং বন্ধু সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ও সহযোগিতায় সম্মেলন সফলভাবে সমাপ্ত হয়।