“নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা”-র প্রতিষ্ঠাতাকালীন আহবায়ক,
মাওবাদী বিপ্লবী
নেতা কমরেড শিবলী কাইয়ুম দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ নভেম্বর,
২০১১ ভোর রাতে ঢাকার এক
হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করেছেন।
বিগত শতকে ষাট-দশকের
শেষার্ধে ও সত্তর-দশকের
প্রথমে এদেশে মাওবাদী
আন্দোলনের সূচনাকালেই
কমরেড শিবলী মাওবাদী
আন্দোলনের সংস্পর্শে আসার
সুযোগ পান এবং ১৯৭৩/’৭৪-
সালে কিশোর বয়সেই তিনি
এতে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু
করেন। সেই থেকে তিনি
আমৃত্যু বিপ্লবী
রাজনীতির
অনুশীলনেই তার সারাজীবন
উৎসর্গ করে গেছেন।
কমরেড শিবলী ১৯৬১ সালে ৭ জানুয়ারী বরিশালে জন্মগ্রহণ
করেন। মাদারীপুর জেলার শিবচরের দত্তপাড়া টিএন একাডেমী থেকে
এস.এস.সি. পাস করেন এবং এইচ.এস.সি. পাশ ক’রে জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। এ সময়ে প্রগতিশীল
ছাত্র রাজনীতিতে তিনি যুক্ত হয়ে সেখানে বিপ্লবী
রাজনীতি প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ‘৮০-দশকের প্রথম দিকে তিনি বিপ্লবী
ছাত্র
মৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ‘৮২-সালে দেশ ও জনগণের উপর এরশাদের সামরিক শাসন চেপে
বসলে তিনি এই স্বৈারাচার
বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে
থেকে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব
দেন। ‘৮২-সালের ১৭ সেপ্টেম্বর
শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে সামরিক
শাসন বিরোধী পোস্টার লাগানোর
‘অপরাধে’ সামরিক সরকার তাকে
গ্রেফতার করে এবং সংক্ষিপ্ত
সামরিক আদালতে ৭ বছর সশ্রম
কারাদন্ড দেয়। কারাগারে
বন্দীদের দাবী আদায়ের
আন্দোলন গড়ে তোলার কারণে
তাকে রংপুর কারাগারে বদলী
করে সামরিক সরকার। তার
মুক্তির দাবীতে এবং সামরিক
শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-গণআন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে ‘৮৩-সালের ৫
জুলাই তাকে মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হয়।
তখনকার ছাত্রজোট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শরীক দল বিপ্লবী
ছাত্রমৈত্রী’র সাথে লাইনগত সংগ্রাম পরিচালনার এক পর্যায়ে তিনি
ছাত্রমৈত্রী ত্যাগ করেন এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের ভিত্তিতে ৮৩-সালের ২৪ নভেম্বর তার নেতৃত্বে গঠিত হয় “বিপ্লবী
ছাত্র আন্দোলন” (বর্তমানে যা “বিপ্লবী
ছাত্র-যুব আন্দোলন”)।
তিনি এই বিপ্লবী
ছাত্র সংগঠনের আহবায়ক নির্বাচিত হন।
এবং ‘৮৫-সালে বর্ধিত সভায় এর সভাপতি নির্বাচিত হন।
তার নেতৃত্বে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ছাড়াও
ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবী-দাওয়ার
আন্দোলনও পরিচালিত হয়। কিন্তু তিনি ছাত্র আন্দোলন ও
গণআন্দোলনের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর বিপ্লবী
সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেন এবং দেশে ও বিদেশে বহুবিধ
বিপ্লবী
সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। এ
রাজনীতির কারণেই তার বুর্জোয়া শিক্ষা-জীবনের অবসান
ঘটে।
বাংলাদেশে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শে নয়া
গণতান্ত্রিক বিপ্লব
সংগঠিত করার পক্ষে তিনি “নয়া গণতান্ত্রিক
গণমোর্চা” গঠনে নেতৃত্ব দেন। সাম্রাজ্যবাদ ও শাসক শ্রেণী
বিরোধী সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ ও বেগবান করার জন্য তিনি
নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ
২০০১ সালে গড়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী কয়েকটি
সংগঠনের জোট “সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী গণতান্ত্রিক
ঐক্য”(এ.আই.ডি.ইউ.)। পরবর্তীতে “জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল”
ও “জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ”-এর সাথে “নয়া গণতান্ত্রিক
গণমোর্চা” একত্রে সাম্রাজ্যবাদ ও দালাল শাসক শ্রেণী
উচ্ছেদের সংগ্রামকে আরো গতিশীল করার জন্য ৩-সংগঠনের
জোট গঠন করে যাতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদে দৃঢ় কমরেড শিবলী
কাইয়ুম সকল ধরনের সংশোধনবাদ, সংসদীয়বাদ,
অর্থনীতিবাদ, সংস্কারবাদ, জাতীয়তাবাদ, বিলোপবাদ প্রভৃতির
বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনা ক’রে বিপ্লবী
মতাদর্শ ও
রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।
নির্মোহ-ত্যাগী এই কমরেড ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন
বিনয়ী, আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রতিষ্ঠা বিমুখ। শ্রমিক-কৃষক দরদী
এক দৃঢ়চিত্তের মানুষ। তার মৃত্যুতে এ দেশের বিপ্লবী
আন্দোলনের এক গুরুতর ক্ষতি সাধিত হলো। আসুন, আমরা
জনগণের মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত এই বিপ্লবী
নেতার স্মৃতির
প্রতি জানাই লাল সালাম এবং তার আরব্ধ কাজকে এগিয়ে
নেবার শপথ নেই।
-
সাম্প্রতিক লেখা
সংগ্রহ
বিষয়
-
Join 6 other subscribers
Blogroll
Top Clicks
- None