আওয়ামী-জোট সরকারের মন্ত্রী পরিষদ ৭ মার্চ, ১১ “নারী উন্নয়ন নীতিমালা” পাশ করেছে। আর এ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে ধর্মীয় মৌলবাদী দলগুলো। তারা ৪ এপ্রিল হরতালও ডেকেছে। ১৪ মে ডেকেছে মহাসমাবেশ। তারা বলছে কোরান-হাদিস বিরোধী নীতি তারা মানবেন না।
ধর্মীয় রাজনীতির এ হুমকিতে পড়ে তড়িঘড়ি নারীমন্ত্রী ঘোষণা করেছে যে, তারা এমন কিছু নীতি নেননি। তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমাধিকারের নীতি নেননি। তারা শুধু বলেছেন যে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ্ত সম্পদের উপর নারীর সমাধিকার। শেখ হাসিনা সরাসরি বলতে শুরু করেছে যে, কোরান-হাদিস বিরোধী কোন নীতি তারা করবেন না।
ব্যস, খেলা-তো শেষ হবার কথা। কিন্তু হুজুররা অটল। কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে।
* বর্তমান মহাজোট সরকার যে নারী নীতি ঘোষণা করেছে তাতে শব্দের অনেক মারপ্যাঁচ রয়েছে। তারা নারীর সম্পদের উপর সমানাধিকারের গদবাঁধা কথা বলে উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পদে নারীর সম-অংশীদারীত্বের প্রশ্নটি সুচতুরভাবে এড়িয়ে গেছে। এবং সম্পদে নারীর সমানাধিকারের ফাঁকা কথা বলেছে।
এভাবে তারা একদিকে সমস্ত নারী সমাজকে ধোঁকা দিয়েছে দেখেছো, আমরা নারীদেরকে সমানাধিকার দিয়েছি! আর অন্যদিকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট রাখতে চেয়েছে দেখো, আমরা তোমাদের মতের বিরোধী কোন নীতি করিনি! জঘন্য আত্মসমর্পণ আর শঠতা কাকে বলে।
* বিভিন্ন ধর্মে নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের প্রশ্নে বিভিন্ন নীতি রয়েছে। হিন্দু ধর্মে মেয়েরা পৈত্রিক সম্পদ পায় না। সেজন্য এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপক অংশ এ আইনের পরিবর্তন চান। ইসলাম ধর্মে মেয়েরা সম্পদ পায় ছেলেদের অর্ধেক। তবে সে সম্পদও আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে নারীরা দখলে পান না। বিবিধ কারণে সেটা ভাইদের হাতেই অধিকাংশ নারী রেখে দিতে বাধ্য হন। এ ধরনের বিবিধ ধর্মীয় বিধানগুলো কিভাবে পরিবারে প্রয়োগ হবে সেটা নিজ নিজ ধর্মের বিশ্বাসের বিষয়।
কিন্তু রাষ্ট্রকে চলতে হবে নারী-পুরুষের সমাধিকারের নীতির ভিত্তিতে। রাষ্ট্রকে চলতে হবে ধর্মনিরপেক্ষভাবে। তবেই সে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে।
শাসক শ্রেণী একদিকে “নারী উন্নয়ন”-এর কথা বলছে, অন্যদিকে বলছে আমরা কোরান-সুন্নাহর বিরোধী কিছু করবো না। মৌলবাদীদের আন্দোলন থামাতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন কোরান-সুন্নাহ’র বিরোধী কোন রায় আমার দ্বারা হবে না। এগুলো-তো স্রেফ প্রতারণা। তাহলে আর হুজুররা দোষের কী করছে? তারা তো কোরানকেই রাষ্ট্রের নীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে!
এমনকি সরকার যদি কাগজে কলমে বলেও যে জমি ও সম্পদে উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর সমাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হলো, তাহলেও নারী মুক্তি হবে না। কারণ, সমাজের আমূল রূপান্তর ব্যতীত তার কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়। যেমন কিনা এখন মুসলিম আইনে যে অর্ধেক সম্পদ নারীরা পাবার অধিকার রাখেন সেটাও তারা প্রায়ই নিতে পারেন না।
* ধর্মীয় মৌলবাদীরা সরাসরি নারীর সমাধিকারের বিরুদ্ধে নেমেছে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে। একে অবশ্যই বিরোধিতা করতে হবে। কিন্তু অন্যদিকে নারী অধিকারের বুলি আউড়ে যে মুৎসুদ্দী মার্কা স্বাধীনতা নারীকে এই রাষ্ট্র বা আওয়ামী লীগ দেবার বাহানা করে তার প্রতারণাকেও উন্মোচন করতে হবে। পরিস্কারভাবে দেখাতে হবে যে, যেমনি ধর্মীয় মৌলবাদ, তেমনি আওয়ামী সরকার উভয়ে নারীর শত্রু বই আর কিছু নয়। তারা নারী মুক্তি দূরের কথা, সম্পদে নারীর গণতান্ত্রিক অধিকারটুকু পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নয়। সুতরাং, যে নারীর পৈত্রিক সম্পদই তেমন নেই, বা মোটেই নেই, এবং যারা কিনা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, তাদের প্রকৃত কোন মুক্তি এদের থেকে আশা করার প্রশ্নই আসে না।
আর, রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে যে, ধর্ম থাকবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, ধর্মকে অবশ্যই রাষ্ট্র থেকে পরিপূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। নতুবা কোনক্রমেই নারী তার গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে না। বলাই বাহুল্য শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, এই রাষ্ট্র বারবারই তা নাকচ করে দিয়েছে।