আতংকটা ছড়িয়েছিল খোদ সরকারই প্রথমে। সরকার গত রোজার ইদের আগে দেশব্যাপী রেড এ্যালার্ট জারী করে এ আতংকে ঘৃতাহুতি দেয়। এর সাথে তাল মিলিয়ে বুর্জোয়া মিডিয়াগুলো তারস্বরে চেঁচানো শুরু করে। কিন্তু ফল যা হলো তা ভয়াবহ। বাস্তবে রেড এ্যালার্ট জারী করলেও সে অনুযায়ী কোন পদক্ষেপই সরকার নিতে ব্যর্থ হয়। বহু এলাকায় টিকা সরবরাহ করতে অথবা টিকা সেবা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়। কিন্তু পশু মন্ত্রী সদম্ভে বিটিভি-তে ঘোষণা দিয়েছিল যে, সারা দেশে মহামারী লেগে গেলেও টিকার কোন অভাব হবে না। এভাবে দ্বিচারী ভূমিকা নেয়ার ফল যখন ভয়াবহ রূপে দেখা গেল, মানুষ গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিল, বিশেষত রোজার ইদে গরু বিক্রি একেবারে কমে গেল, গরু ও মাংস ব্যবসায়ীরা আল্টিমেটাম দিল, সামনে কোরবানী ঈদকে রেখে চামড়া উৎপাদকরা হুমকি দিল, তখন সরকার বাধ্য হয়ে হঠাৎ করে সুর পাল্টে ফেলে বললো কোন ভয় নেই। আর উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেবার মত করে ঘোষণা করলো মুরগী উৎপাদকরা চক্রান্ত ক’রে নাকি এই আতংক ছড়িয়েছিল। এ সরকারকে সবকিছুতেই এখন একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ভর করতে দেখা যাচ্ছে। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে নিজেদের ষড়যন্ত্রকে আড়াল করা এবং প্রকৃত কোন ষড়যন্ত্র থাকলে তার থেকে দৃষ্টি জনগণের ও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে পরিচালিত করা। কিছুদিন আগে একবার বার্ড ফ্লু আতংক ছড়িয়ে এদেশের সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্পকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে ভারতীয় ডিম ও মুরগীতে বাজার সয়লাব হয়ে যাবার সুযোগই সৃষ্টি হয়েছিল। এবার এ্যানথ্রাক্স আতংকে দেশের গরু উৎপাদন শিল্পকে ধ্বংস করার দিকে নেয়া হয়েছে। এর আগেই পাবনা অঞ্চলের দুগ্ধ উৎপাদকদেরকে সংকটে ফেলা হয়েছিল দুধের সঠিক মূল্য নিশ্চিত না করার মাধ্যমে। দুগ্ধ শিল্প ধ্বংস সরাসরি এদেশে বিদেশী টিন দুধ আমদানীর সাথে জড়িত। এখন গরু শিল্পকে ধ্বংস করার মাধ্যমে সরাসরি লাভবান হবে ভারতের গরু ও চামড়া শিল্প। সুতরাং প্রকৃত ষড়যন্ত্রটা কোথায়, আর তাদের সাথে বর্তমান ভারত-বন্ধু সরকারের সখ্যতাটা কী রকমের তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে গরু পালনকারী ও ফার্মগুলোর জন্য এ্যানথ্র্যাক্স একটা সমস্যাও বটে। সেক্ষেত্রে সরকার এবারও চূড়ান্ত ব্যর্থতা (বা ইচ্ছাকৃত গাফিলতি)’র প্রমাণ দিয়েছে। অথচ এই তড়কা রোগ দেশে আগেও ছিল, নতুন কিছু নয়, এতে কোন মানুষ মারা যায়নি, গরুর ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন, যা সরকারী পশু স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব ও উচিত। শুধু তাই নয়, রোগ যাতে না ছড়ায়, সেজন্য মৃত গরুর জন্য কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। তাহলে কৃষকরাও আর অসচেতনভাবে রোগ ছড়ানোয় ভূমিকা থেকে বিরত থাকবেন। এই শাসকশ্রেণী মুরগী, মাছ, গরু এসব কৃষি ভিত্তিক শিল্পের চেয়ে জোর দেয় কম্পিউটার আর গার্মেন্টস মালিকদের তোষণে, যার সাথে দেশের প্রকৃত উন্নয়নের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। কৃষি ভিত্তিক উপরোক্ত শিল্পগুলোতেও ততটাই জোর দেয়, যতটা তাদের সহযোগী বিদেশী কোম্পানীর বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজন।
-
সাম্প্রতিক লেখা
সংগ্রহ
বিষয়
-
Join 6 other subscribers
Blogroll
Top Clicks
- None