ইভটিজিং নামের যৌন সন্ত্রাসের উৎসটা কোথায়?

ইভটিজিং-এর নামে যা এখন মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে, আগেও হয়েছে, তাকে ইভটিজিং বলা যায় না। এটা হলো যৌন সন্ত্রাস। একজন মেয়ে ছেলেটিকে পছন্দ না করলেও তাকে জোর করে বিয়ে করতে চাওয়া, বা তাকে যৌন হয়রানী করা, না হলে তাকে ধর্ষণ করা বা হত্যা করা, প্রতিবাদকারী মা/বাবা/ভাই/আত্মীয়/অভিভাবককে হত্যা করা বা নির্যাতন করা এগুলো হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এবং একটি চরম গণবিরোধী সন্ত্রাস কবলিত রাষ্ট্র ও সমাজের একটা খন্ড চিত্রমাত্র। সরকার, পুলিশ, সুশীল সমাজ, বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী এরা এই সমাজকেই ধারণ করে, লালন করে, পালন করে। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া এরকম যৌন সন্ত্রাস চায় কি চায় না সেটা বড় কথা নয়; কিন্তু তারা যে রাজনীতিক দলকে নেতৃত্ব দেয় তার কেডাররা অনেকেই এই ধরণের সন্ত্রাসীই বটে। তাদের নেতা, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ এদের রক্ষা করে। একজন জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, পিন্টু, দুলু তাদের এমপি হয়। তাদের সেনাবাহিনী নিজেরা হত্যা ক’রে লাশ গুম করে। তাদের র‌্যাব দু’হাজারের বেশী মানুষকে বন্দী অবস্থায় হত্যা ক’রে আষাড়ে গল্প ফাঁদে। এমন একটি ব্যবস্থায় যে কিছু যৌন সন্ত্রাসের খবর প্রকাশ হচ্ছে তাকে খুব অল্পই বলা চলে।  এই সমাজে এই সন্ত্রাসী তরুণরা গণবিরোধী ক্ষমতা পেয়ে গেছে তাদের বুর্জোয়া দলগুলোর প্রতিক্রিয়াশীল স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার দৌলতে। তাদের মনন গড়ে উঠেছে বোম্বে ছবির প্রায় নগ্ন নায়িকাদের নাচ-গান এবং নায়কদের ব্যক্তিবীরত্ববাদী সন্ত্রাস দেখে। তারা বড় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল যুগে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের যৌন ছবি দেখে এবং সুযোগ হলে তা বানিয়ে। তারা যে সমাজে গড়ে উঠছে সেখানে নারীকে দেখা হয় ভোগ্য পণ্য বা নিম্নপ্রজাতির প্রাণী হিসেবে। তরুণ তরুণীরা পরস্পর বন্ধু হওয়ার সুযোগ এখানে নেই, তাহলে পুলিশও তাদেরকে ধরে নেবে। তাদের তারুণ্যের জীবনে অশ্লীল বিকৃত গণবিরোধী যৌন চর্চা ব্যতীত কোন বিনোদনের ব্যবস্থা শাসকশ্রেণী ও রাষ্ট্র রাখেনি। শহর নগরের সমস্ত খেলার মাঠ, সকল সাঁতারের পুকুর-খাল পরিণত হয়েছে হাউজিং, শপিং মল আর বস্তিতে। বই পাঠ, খেলাধুলা, প্রগতিশীল সংস্কৃতি ও রাজনীতি চর্চার জায়গা দখল করেছে হুন্ডা প্রীতি, মাস্তানবাজী, আর সিডি/ডিভিডি/মোবাইল/ইন্টার নেটের যৌন চর্চা/ভিডিও গেমের মারামারি। এই তরুণরা অপরাধী যখন হয় তখন দায়টা কার?  শুধু বিপ্লবীই এই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ভারতের ছত্তিশগড়ে দেখুন, তরুণ আর তরুণীরা একত্রে এক বাহিনীতে থাকছে, যুদ্ধ করছে, সমাজকে বদলাচ্ছে, নিজেদেরও বদলে নিচ্ছে। সেটা ব্যতীত এনজিও, বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্তদের আহাজারিতে এই পরিস্থিতির মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে না। তরুণ ও তরুণীদের উন্নত জীবনের জন্য বিপ্লবের পথেই আসতে হবে।

About andolonpotrika

আন্দোলন বুলেটিনটি হলো বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের একটি অনিয়মিত মুখপত্র
This entry was posted in আন্দোলন ৭. Bookmark the permalink.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s